আরিফুর রহমান: সরকারী নিয়মনীতির কোনো ধরণের তোয়াক্কা না করেই নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার রাস্তাঘাট, হাটবাজার এবং সড়কের মোড়ে মোড়ে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অতি দাহ্য প্রদার্থ অকেটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। এতে যে কোনো সময় অগ্নিকান্ড ঘটে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। অথচ প্রশাসন এ ব্যাপারে নির্বিকার।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলার হাটবাজারে বিভিন্ন সড়কের পাশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার। এসব গ্যাস সিলিন্ডারের গায়ে নেই কোনো উৎপাদন তারিখ, ওজন কিংবা কোম্পানির নাম। গ্যাস সিলিন্ডারের পাশাপাশি দোকানে রয়েছে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিনের ড্রাম। ড্রামের ওপর পরিত্যক্ত মিনারেল ওয়াটারের বোতলে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ভরে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। যে কোনো ব্যক্তি চাইলেই এক থেকে তিন লিটারের প্লাষ্টিক বোতল ভর্তি এসব অতি দাহ্য পদার্থ কিনতে পারছেন। হঠাৎ এসব পদার্থ থেকে আগুন লেগে গেলে নেভানোর কোনো ব্যবস্থাও নেই এসব দোকানে।
গত মঙ্গলবার (২৩জুন) রাতে হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ঘাট বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্য তেলের দোকানে অগ্নিকান্ডের ঘটণা ঘটে ব্যবসায়ী মহিবুল ইসলাম নিপু সহ ৩জনের প্রাণহানী হয় এবং এ সময় অনেকে আহত হন। স্থানীয় সু্ত্রে জানা যায়, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্পোরিত হয়ে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে এবং ২০টি দোকান ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ অগ্নিকান্ডে ওই বাজারের প্রায় ৪কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানা যায়।

মঙ্গলবার(২৩জুন) হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে সিলিন্ডার বিষ্পোরিত হয়ে অগ্নিকান্ডের দৃশ্য। ছবি- সুবর্ণবার্তা
সুবর্ণচর ও হাতিয়া এলাকার একাদিক ব্যক্তি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, যে কোনো সময় ছোট বোতল ভর্তি এসব অতি দাহ্য তেল ও সিলিন্ডার একসাথে থাকার কারনে আরো বড় ধরনের অগ্নিকান্ড ঘটাতে পারে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার স্বার্থে খোলা বাজারে এসব অতি দাহ্য পদার্থ বিক্রি বন্ধ করা উচিত।
সুবর্ণচর উপজেলার কয়েকজন গ্যাস সিলিন্ডার ও খুচরা অতি দাহ্য পদার্থ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আইন-কানুন সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। প্রতিদিন ৪-৫টি সিলিন্ডার ও ১০-২০লিটার অকটেন, পেট্রোল বিক্রি করে থাকেন তারা।
সুবর্ণচর উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সাব-অফিসার মোহাম্মদ নুরুনবী বলেন, বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর এলপি গ্যাস রুলস অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কোনো এলপি গ্যাস মজুদ করা যাবে না। একই বিধির ৭১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে,দাহ্য পদার্থ বিক্রির দোকান ঘর পাকা হতে হবে এবং আগুন নেভানোর যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি থাকতে হবে। সে মোতাবেক গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার মজুদ ও বিক্রির জন্য লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। খোলা পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি বিক্রির জন্য স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস দপ্তর থেকে অনুমতি নেওয়ার বিধি থাকলেও অনেক ব্যবসায়ী তা নেননি।
সুবর্ণচর উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, অনেক দোকানে দেখেছি সিলিন্ডার ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ একসাথে রাখা হয়েছে। নির্ধারিত পেট্রোল পাম্প ছাড়া খোলা বাজারে অতি দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা যাবে না। এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রয়েছে এবং খুব কম সময়ের মধ্যে আরো জোরালোভাবে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান চালনো হবে।