২০০৮ সালের রমজান মাসে সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি চট্টগ্রাম, এশিয়ান এস আর হোটেল, নিউমার্কেট, চট্টগ্রামে একটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। আমি এর কয়েকমাস পূর্বে সাউর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার পদে জয়েন করি। এরও কিছুদিন পূর্বে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার পাঠ শেষ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এল এল এম করার সময় আমি সুবর্ণচর ছাত্র ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলাম। আমার সভাপতিত্ব শেষে নতুন নির্বাচন এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য বার্ষিক সভা আয়োজন করি। সুবর্ণচর উপজেলার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সকল শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রামস্থ সুবর্ণচরের বিভিন্ন লোকজন থেকে মাত্র কয়েক হাজার টাকা অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করি যা আমাদের বার্ষিক অনুষ্ঠান করার জন্য খুবই অপ্রতুল ছিল। টাকা নাই কিন্তু ফোরামের অনুষ্ঠান করতেই হবে। কি করা যায় ভাবতে থাকি। উপায়ান্তর না পেয়ে বাড়িতে ফোন করি এবং অনেক অনুনয় বিনয় করে কয়েক হাজার টাকা আনতে সক্ষম হই। যা হোক সফলভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করি। যখন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চুড়ান্তভাবে ছেড়ে আসি তখন আমার পকেটে মাত্র কয়েকশত টাকা ছিল। ভীষণ অভিমান বুকের ভিতর জমেছে এই ভেবে যে সুবর্ণচরের এত মানুষ চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করে অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটা বার্ষিক অনুষ্ঠান করার জন্য তাদের তেমন কারও কোন সহযোগিতা পেলাম না। এটা খুবই হতাশার এবং লজ্জার। মনের ভিতরে এলাকার লোকজনের প্রতি ভীষণ অভিমান এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যা হোক, কয়েকমাস ঢাকায় বসবাস করি আর এল এল এম এর রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ২০০৮ সালের মে মাসের ১৩ তারিখ এল এল এম এর রেজাল্ট বের হয় এবং আমি ফাস্টক্লাস সিক্সথ হই। রেজাল্ট বের হবার মাত্র দুদিন পরেই সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে আমার চাকুরি হয়ে যায়। যে কথায় ছিলাম, সাউদার্নে জয়েনের মাত্র কয়েকমাস পরেই এশিয়ান এস আর হোটেলে ঐ ইফতার পার্টিতে আমি একবারে শেষ মূহুর্তে উপস্থিত হই। তখন প্রধান অতিথি হিসাবে একজন ভদ্রলোক বক্তব্য রাখছিলেন যাকে আমি চিনিনা এবং কোন দিন দেখিনি। উনার অল্প একটু বক্তব্য শুনতে পেরেছি যাতে তিনি বলতেছিলেন যে সুবর্ণচরে যারা চট্টগ্রাম বসবাস করে তাদের যে কোন প্রয়োজনে তিনি ভবিষৎতে পাশে থাকবেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। ঐ দিকে উনার সহযোগিতার কথা শুনে আমার সাড়ে চব্বিশ বছরের মস্তিষ্ক ক্রমান্বয়ে আগ্নেয়গিরির লাভার মত উদগিরণ করছিলো। যা বুঝলাম তিনি চট্টগ্রাম শহরের কোন এক থানার সম্মানিত ওসি। উনার বক্তৃতার পর সভাপতির বক্তব্যের পালা তবে সঞ্চালক সম্মান প্রদর্শন করে আমাকে কিছু বলার অনুরোধ করছিল। আমি ভাবলাম যাক বাবা, সুযোগ যখন পেলাম তখন ওসি সাহেবকে দু-চারটি কথা শুনিয়ে দিই। আমি ভীষণ ক্ষোভ ও বিরক্তি নিয়ে বলতে থাকি “যে এরকম অনুষ্ঠানে যারা আসে তারা লোক দেখানো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে থাকেন কিন্তু দিন শেষে তাদেরকে আর পাওয়া যায়না। সুতরাং এসব লোক দেখানো কথা বলে শুধুশুধু বাহবা নেয়ার দরকার কি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অনুষ্ঠান করতে গিয়ে চট্টগ্রামস্থ সুবর্ণচরের তেমন কারও সহযোগিতাই পেলাম না আর এখানে সবাই সকল প্রয়োজনে সহযোগিতার বড় বড় আশ্বাস দিচ্ছেন। এধরনের আশ্বাস ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই না”। আমার বক্তৃতায় অনেকেই মনে কষ্ট পান এবং অনেকেই আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করতে থাকেন যে আমি ওসি মহোদয়কে ভুল বুঝেছি। যা হোক, উপস্হিত অনেকেই আমার প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন। যা হোক সবাই মিলে ইফতার করে অনুষ্ঠান শেষ করে ঐ হোটেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার পাক্কালে ওসি মহোদয়ের সাথে আমার কথা হয়। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং বলেন ” আপনাকে আমি চিনিনা তবে আপনার কথা সত্য, আমি নিজেও সুবর্ণচরের মানুষের সাথে তেমন পরিচিত নহে, তবে আমি কথা দিলাম আপনি আগামীদিনে আমাকে ইনশাল্লাহ আপনাদের পাশে পাবেন”. আমি বলি সেই দিনের আশায় থাকলাম আংকেল। তখন তিনি তাকে ভাই বলে সম্বোধন করার অনুরোধ করেন কিন্তু তাকে আংকেলই সম্বোধন করতে থাকি। এর পর একদিন তাকে আমি ফোন করে একটি বিষয়ে সহযোগিতা চাই। তিনি আমাকে তার থানায় যেতে বলেন। সেখানে যায়, অনেক কথা হয় আমাদের দুজনের এবং আমার কাজটিও তিনি করে দেন। সেই থেকে আমাদের পথচলা। আজ ওসি ফারুক আংকেলকে চিনেনা চট্টগ্রামস্থ সুবর্ণচরের এমন কোন লোক আছে বলে জানা নাই। আংকেল আমার আত্নার আত্নীয়। আমাদের বন্ধন সাধারণ সম্পর্কের সীমানা ছাড়িয়ে পরমাত্মীয়তে রুপান্তরিত হয়েছে। আংকেল আপনি বেঁচে থাকবেন সুবর্ণচরের মানুষের হৃদয়ে জনম জনমে। আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করেছেন। আপনি আমাদের পাশে আছেন, পাশে থাকবেন। আমাকে অনেকেই না চিনলেও আপনাকে সুবর্ণচরের সকল মানুষ চিনে। এ কৃতিত্বে আমারও ভাগ আছে এবং তা অধিকার বলে আমার দখলে নিয়ে রাখলাম। আপনার জন্মদিনে এই নিরীহ মানুষের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা নিবেন। শুভ জন্মদিন ওসি ফারুক আংকেল।।
শুভেচ্ছান্তে – শাহীন সিরাজ, জজ, সদর কোর্ট, চাদঁপুর।

Thank you!!1