ডলারের দামবৃদ্ধি, আইএমএফের চাপ, বৈশ্বিক বাস্তবতা — সব মিলিয়ে ত্রিমুখী সংকটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ অবস্থায় আবারো চাপছে গ্রাহকের ওপর দাম বাড়ার খড়গ। আইএমএফের পরামর্শে ঘাটতি কমাতে এখন থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা নীতিনির্ধারকদের, যা চলবে আগামী তিন বছর ধরে। তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব বলছে, আইএমএফের প্রেসক্রিপশন আরো নাজুক করবে গ্রাহকস্বার্থ আর জ্বালানি নিরাপত্তাকে।
নানামুখী সংকটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধুঁকতে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সমানভাবে বিপাকে ফেলেছে গ্রাহকদেরও। ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে নয়বার। কিন্তু গত দেড় বছরেরও কম সময়ে এ দাম বাড়ে চারবার।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে ৩ টাকা ৭৩ পয়সায় থাকা ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ১৪০ শতাংশ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। আর এ অবস্থা এবার আরো নাজুক হওয়ার পালা।
বলা যায়, আমদানিনির্ভর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্রায় পুরোপুরি ডলার কেন্দ্রিক। তেল, কয়লা, এলএনজি কিংবা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দেনা, বিদেশি কোম্পানির পাওনা — সবই পরিশোধ হচ্ছে ডলারে। কিন্তু ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানোয়, আবারো বাড়তি ব্যয়ের শঙ্কা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ঘিরে। আন্তর্জাতিক বাজারের নানামুখী অনিশ্চয়তাও কাটেনি এখনো।
তার ওপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ-এর কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ভর্তুকিমুক্ত করাসহ নানা সংস্কারের পথে হাঁটতে অনেকটাই বাধ্য হচ্ছে সরকার। আর এসবের ভার গিয়ে চাপছে সাধারণ গ্রাহকের কাঁধে।
আর এসবের ভার গিয়ে চাপছে সাধারণ গ্রাহকের কাঁধে। আইএমএফের শর্ত, চাপ কিংবা পরামর্শ — যাই বলা হোক না কেনো, সেটি অনুসরণ করতে গিয়ে তিন মাস পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এটি অন্তত তিন অর্থবছর ধরে চলবে বলে জানান তিনি।
তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব মনে করে, অযৌক্তিক ব্যয় কমানো, ট্যাক্স-ভ্যাটের মতো রাজস্ব খাত থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে মুক্ত রাখাসহ কিছু নীতি সংস্কার করলে দাম না বাড়িয়েও ঘাটতি সমন্বয় সম্ভব।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় কমিয়ে আনলে দাম বাড়াতে হবে না। বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে রাখা হয়েছে, কিন্তু সক্ষমতা অনুযায়ী যোগান দিতে পারছে না। ওইসব কেন্দ্রের পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে লুণ্ঠন করা হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
দেশে জ্বালানি তেলের ৯০ শতাংশের বেশি আমদানিনির্ভর হওয়ায় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বড় তারতম্য ঘটতে পারে কৌশলগত এ পণ্যটির দামও।