জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে বিশ্বের কোটি কোটি শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ শিশু বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩.১ মিলিয়নে। যা প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার শিশু বাস্তুচ্যুত হওয়ার সমান। আর তার প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বন্যা, খরা, ঝড় ও দাবানলের মতো আবহাওয়ার বিপর্যয়। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ভুক্তভোগীদের প্রতি মনোযোগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে সংস্থাটি। এএফপি, গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই আর ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা তুলে ধরতে ইউনিসেফ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি মনিটরিং সেন্টারের সঙ্গে কাজ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বন্যা, ঝড়, খরা এবং দাবানলের মতো চার ধরনের জলবায়ু বিপর্যয়ে ৪৪টি দেশে ৪৩.১ মিলিয়ন শিশু বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে। আর শুধু বন্যা ও ঝড়ের কবলে পড়ে ৯৫ শতাংশের বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে।
এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী কিছু শিশুর হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী শিশুর প্রকৃত সংখ্যার ‘সামান্য অংশ’ উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিবেদনের সহযোগী গবেষক লরা হিলি।
ইউনিসেফের প্রকাশিত মোট বাস্তুচ্যুতির অর্ধেকেরও বেশি ঘটনা ঘটেছে চীন, ফিলিপাইন ও ভারতে। এই তিন দেশে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ২২.৩ মিলিয়ন। এরমধ্যে চীনে এই সংখ্যা ৬.৪ মিলিয়ন। ভারতে শিশু বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ৬.৭ মিলিয়ন। আর ফিলিপাইনে ৯.৭ মিলিয়ন। প্রতিবেদনে এর জন্য দেশগুলোর ভৌগোলিক অবস্থা, মৌসুমি বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় আর বৃহৎ জনসংখ্যাকে দায়ী করা হয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া শিশুর সংখ্যা ৩.৩ মিলিয়ন।
শিশু বাস্তুচ্যুতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ছোট দ্বীপ রাজ্যগুলোতে। যার মধ্যে অনেকেই জলবায়ু জরুরি অবস্থার কারণে অস্তিত্বের হুমকির মুখোমুখি। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলোতে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
২০১৭ সালে হারিকেন মারিয়ার আঘাতে ছোট ক্যারিবিয়ান দ্বীপ ডোমিনিকাতে ৭৬ শতাংস শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদানে বন্যার কারণে সর্বাধিক শিশু বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সংখ্যাটি যথাক্রমে দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার ১২ ও ১১ শতাংস।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে সুদানী শিশু খালিদ আব্দুল আজিমের দুর্ভাগ্যের গল্প। বন্যার কারণে তার গ্রামে পৌঁছানোর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। আব্দুল আজিম বলেন, ‘আমরা আমাদের জিনিসপত্র হাইওয়েতে সরিয়ে নিয়েছি। আর আমরা এখানেই বাস করেছি কয়েক সপ্তাহ ধরে।’
প্রতিবেদনটিতে বাস্তুচ্যুত শিশুরা কীভাবে বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে বাস করছে সেটিও তুলে ধরা হয়েছে। এসব ঝুঁকির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাদের পিতামাতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অথবা শিশু পাচারকারীদের হাতে পড়া।