সবজিতে আগুন, মাছ-মাংসের বাজারও চড়া

0
43

নিত্যপণ্যের বাজারে কমার বদলে দিন দিনই যেন বাড়ছে অস্থিরতা। মাছ-মাংস এবং শাক-সবজি— কোনোটিরই দাম নাগালে নেই। এতে নাজেহাল সাধারণ ভোক্তারা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ও আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি সবজির দামই কেজিতে বেড়ে গেছে ২০-৩০ টাকার বেশি। আলু ও পেঁপে বাদে ৮০ টাকার নিচে মিলছে না কোনও সবজি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় এবং সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টির প্রভাবে বাড়ছে শাক-সবজির দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, হাতেগোনা দু-একটি সবজি ছাড়া কোনটিই নেই ৮০ টাকার নিচে; বেশিরভাগেরই দাম ১০০ টাকা বা তার ওপরে।

কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন,
প্রতি বছরের এ সময়টায় সবজির দাম চড়া থাকে। কারণ এটা মৌসুমের শেষ সময় এবং পরবর্তী শীত মৌসুমের সবজি বাজারে আসতে শুরু করে। বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকে।

তবে শীতকালীন সবজি পুরোদমে বাজারে আসা শুরু হলে দাম কমবে জানিয়ে উজ্জ্বল বলেন, ‘বাজারে সবজির দামের যে অবস্থা, তাতে কমে গেছে বেচাবিক্রি। তাই কম লাভে বিক্রি করছি, না হলে মানুষ কিনবে না।’

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ১০০-১২০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১০০ টাকা, বরবটি ১৩০ টাকা, মুলা ৮০-১০০ টাকা, লতি ১০০ টাকা, কহি ১০০ টাকা, ধুন্দুল ৯০-১০০ টাকা ও পটোল ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, টমেটো ২৪০ টাকা, শিম ২৫০-৩০০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়।

এছাড়া, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৩০০-৩৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা ও আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। আর প্রতি পিস ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০-১০০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা।
দামে পিছিয়ে নেই শাকের বাজারও। লালশাকের আঁটি ২০ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, কলমিশাক ১০-১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ঊর্ধ্বমুখী দামে নাজেহাল সাধারণ ভোক্তারা। তারা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা। এতে বাজার অস্থির করে ভোক্তার পকেট কাটার সুযোগ পাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

জামাল নামে এক ক্রেতা বলেন,
বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি সরকার টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তবে বাজারে নেই পর্যাপ্ত তদারকি কার্যক্রম। এই সুযোগে বাজার আরও অস্থির করে তুলছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু পদক্ষেপ নিলেই হবে না, বাজার নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপের কার্যকরী প্রয়োগ করতে হবে।

তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে কাঁচা মরিচের দাম। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়।

এদিকে, বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

আর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি হারে ২২০০-২৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকায়। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিতে ১৫০০-১৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য কেজিতে গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে নিয়ন্ত্রণে নেই মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৭০ টাকায়। আর সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এছাড়া, জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। মূলত বন্যায় ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমেছে মুরগির উৎপাদন; তাই দাম চড়া।

আর প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

বাজারে বেড়ে গেছে আদা-রসুনের দামও। প্রতি কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়।

সুখবর নেই পেঁয়াজের বাজারেও। দাম বেড়ে গেছে খুচরা ও পাইকারি উভয় ক্ষেত্রেই। খুচরায় প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। এছাড়া, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১২ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-৯৬ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। তাই বাজার চড়েছে। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়ে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে; তখন দাম কমে আসবে।

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।

আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
এদিকে, গত ৭ অক্টোবর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার ও সরবরাহপরিস্থিতি তদারকি এবং পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ১০ সদস্যের বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here