ইট-পাথরের এ যান্ত্রিক নগরীতে একটুখানি স্বস্তির নাম হাতিরঝিল। ব্যস্ত নগরীতে জলাধারের চারপাশে যেমন রয়েছে পিচঢালা পথ, তেমনি সড়কের পাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছ। গাছের ছায়ায় প্রাণখুলে নিশ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে পথিকের জন্য। তবে নান্দনিক এ হাতিরঝিলে আতঙ্কের খবর হলো মাঝেমধ্যেই সেখানে ভেসে ওঠে মানুষের মরদেহ।
রাত বাড়লেই জনশূন্য হয় হাতিরঝিল। নিরিবিলি থাকার সুযোগে সেখানে হত্যার পর লাশ ফেলে যাওয়ার খবর যেমন রয়েছে, তেমনি লেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার খবরও মেলে। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন, হাতিরঝিল কী অপমৃত্যুর নিরাপদ জোন হয়ে উঠছে?
রাজধানীর পূর্ব-পশ্চিমের যোগাযোগ বাড়িয়েছে হতিরঝিল প্রকল্প। যানজটের স্থবিরতায় খানিকটা স্বস্তিও দিয়েছে এর সংযোগ সড়কগুলো। মাঝখানে লেক আর চারপাশে সবুজে ঘেরা সড়কে তীব্র গরমেও শীতল পরশ লাগে পথিকের গায়ে।
তবে সম্প্রতি শান্ত হাতিরঝিল মাঝে মাঝেই হয়ে ওঠে অশান্ত। মাঝে মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অচেনা গলির কিশোর গ্যাং। সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হাতিরঝিলের অস্বচ্ছ জলে মাঝে মধ্যেই ভেসে ওঠে মৃতদেহ।
সবশেষ গত ২০ এপ্রিল হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় রবিন নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। তার বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনায়। তাছাড়া গত ১৫ এপ্রিল ফয়েজ নামের আরেকজনের লাশ উদ্ধার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
প্রায় এক যুগ পূর্বে হাতিরঝিল ছিল রাজধানীবাসীর জন্য বিষফোঁড়া। ছিনতাইকারীদের ভয়ে দিনের বেলায়ও হাতিরঝিল এলাকা দিয়ে হেঁটে যেতে সাহস করত না মানুষ। ২০১৩ সালে হাতিরঝিল উদ্বোধনের পর প্রকল্পটি যেমন প্রাণ ফিরে পেয়েছে, তেমনি রাজধানীবাসী পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও উপভোগ্য পর্যটন কেন্দ্র।
তবে আতঙ্কের বিষয় হলো- উদ্বোধনের পর থেকে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক মরদেহ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যার মধ্যে ২০-২৫ জন প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করেছেন। আর হত্যার শিকার হয়েছেন ২০ জনের বেশি। তাছাড়া ছিনতাই, সড়ক দুর্ঘটনা, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত থেকে শুরু করে অপরাধজনিত নানা অঘটন ঘটছে সেখানে। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে একের পর এক লাশ পাওয়ার ঘটনা। লেকের পানিতে প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের লাশ।
একাধিক সাংবাদিকের মৃতদেহও মিলেছে এই হাতিরঝিলে। দিনের হাতিরঝিল যতটা সুন্দর রাতের হাতিরঝিল যেন ততটাই ভয়ংকর হয়ে উঠছে নগরবাসীর জন্য। রাত ১০টার পর পথিকের চলাফেরা কমতে শুরু করলে বাড়তে থাকে মাদকসেবী, ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আনাগোনা। প্রায়ই পথচারীদের আটকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার খবরও পাওয়া যায়।
তবে পুলিশ বলছে, হাতিরঝিল, গুলশান আর বাড্ডা- এই তিন থানার সীমানায় হাতিরঝিল এলাকা। ভেসে ওঠা এসব মৃতদেহ হত্যা নয় আত্মহত্যা বলে মনে করেন হাতিরঝিল থানার ওসি আওলাদ হোসেন।
তিনি বলেন, কেউ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলে তাকে ঠেকানো কঠিন। তবু পুলিশের চোখে পড়লে তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও আছে।
তবে এতকিছুর পরও হাতিরঝিলকে সবার স্বার্থে নিরাপদ করতে প্রশাসন জোরালো ভূমিকা রাখবে, এমনটাই প্রত্যাশা ঢাকাবাসীর।