ইসলামে ঋণখেলাপির ভয়াবহ শাস্তি

0
30

পৃথিবীতে চলার জন্য অর্থের প্রয়োজন। অর্থ ছাড়া পৃথিবীতে চলা দুষ্কর। তাই তো নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য ফরজ বিধান পালনের পর হালাল উপার্জনের গুরুত্ব দিয়েছেন। হালাল উপার্জনকে ফরজ সাব্যস্ত করেছেন। বিনিময়হীন ঋণ একটি সহযোগিতামূলক লেনদেন। এতে রয়েছে মহা পুণ্য।

ইদানীং বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ঋণ। অনেকে ঋণ নিয়ে বেমালুম ভুলে যায়। আরও আশ্চর্যের কথা হলো, অনেকে ঋণ পরিশোধ না করার উদ্দেশ্যেই ঋণ নেয়।

ঋণ প্রদানে উৎসাহ

মহান আল্লাহ কোরআনে মানুষকে উত্তম ঋণ প্রদানের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। উত্তম ঋণের বহুগুণ বিনিময় ঘোষণা করেছেন। যাতে মানুষ পরস্পরের বিপদে এগিয়ে আসে। করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ প্রদান প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

কে সেই ব্যক্তি? যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে, ফলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আর আল্লাহই রিজিক সংকুচিত করেন এবং বৃদ্ধি করেন আর তোমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৫)

উত্তম ঋণ আদান-প্রদানে রয়েছে বহু ফজিলত। এ কথা যেমন ঠিক আবার ঋণ নিয়ে যদি তা পরিশোধ করা না হয় সে সম্পর্কেও রয়েছে কঠিন শাস্তি। এ সম্পর্কেও কোরআন হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার কোনো পেরেশানি দূর করবে মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার কোনো না কোনো পেরেশানি দূর করে দেবেন। (বুখারি: ৫৬৪১)

ঋণী হওয়া পছন্দনীয় নয়

মহান আল্লাহ ঋণ প্রদানে উৎসাহ দিয়েছেন। তবে অন্যদিকে ঋণী হওয়াকে নিষেধ করেছেন। স্বাভাবিক বিবেকবুদ্ধিও একে পছন্দ করে না। ঋণী হওয়ার অর্থ নিজের কাঁধে অন্যের বোঝা বহন করা। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের দিকে যদি তাকাই তাহলে আমরা দেখি, নবীজি ঋণের বোঝা থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। ঋণী হতে নিরুৎসাহিত করেছেন।

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণগ্রহণকে শঙ্কা ও দুশ্চিন্তার কারণ আখ্যা দিয়েছেন। ঋণের মাধ্যমে জীবনকে সংকটাপন্ন করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। হযরত উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

তোমরা নিজেদের শঙ্কামুক্ত জীবনকে শঙ্কায় ফেলে দিও না। সাহাবিরা বলেন, সেটা কীভাবে হে আল্লাহর রসুল? তিনি বলেন, ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে। (মুসনাদে আহমাদ: ১৭৩২০)

ঋণখেলাপির ভয়াবহ শাস্তি

কার মৃত্যু কখন হবে কেউ জানে না। অনেক সময় ঋণখেলাপি ঋণ আদায় না করেই মারা যায়। তার উত্তরাধিকারীরা যদি ঋণ আদায় না করে। তাহলে সেটি তার পরকালীন সফলতার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি মহান আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হলেও ঋণ অনাদায়ি থাকলে তা জান্নাতে প্রবেশে প্রতিবন্ধক হবে।

ঋণখেলাপি যতক্ষণ তার ঋণ পরিশোধ করবে না, ততক্ষণ অন্য কোনো ইবাদত দিয়ে সে পরকালীন মুক্তি পাবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ঋণ ছাড়া শহীদের সব গুনাহই ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসলিম: ৪৭৭৭)

মহান আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তির পুরস্কার জান্নাত। সব পাপ থেকে মুক্ত। তবে এতো বড় পুণ্যের কাজ করেও ঋণ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ নেই। অন্য হাদিসে আরও স্পষ্ট করে পাওয়া যায়। হযরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাদের বলেন,

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান সর্বোত্তম আমল।

এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমাকে অবহিত করুন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, তাহলে কি মহান আল্লাহ আমার সব পাপ ক্ষমা করবেন? নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

হ্যাঁ। যদি তুমি ধৈর্যসহকারে সওয়াবের আশায় সামনে অগ্রসর হয়ে পিছু না হটে যুদ্ধ করো, তবে ঋণ ছাড়া।(নাসায়ি: ৩১৫৭)

কিয়ামতের দিন ঋণখেলাপি তার ঋণ পরিশোধ ছাড়া এক পাও নড়তে পারবে না। সেদিন তার কাছে ঋণ পরিশোধ করার জন্য টাকা-পয়সা, দিনার-দিরহাম কিছুই থাকবে না। সেদিন তাকে তার নেক-আমল দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যদি নেক আমল না থাকে, তাহলে পাওনাদারের পাপের বোঝা নিজের মাথায় নিতে হবে। অথচ সেদিনের একেকটি নেকির সামনে গোটা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদেরও কোনো মূল্য থাকবে না।

নবীজি বলেন,
কেউ ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে কিয়ামতের দিন তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য কোনো দিনার বা দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না; বরং পাপ ও নেকি অবশিষ্ট থাকবে। (মুসতাদরাক হাকেম: ২২২২)

এ জন্য হয়ত নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজা পড়তেন না। অর্থাৎ কেউ ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা না রেখে মারা গেলে তিনি তার জানাজায় পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতেন না। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজির কাছে যখন কোনো ঋণী ব্যক্তির জানাজা উপস্থিত করা হতো তখন তিনি জিজ্ঞেস করতেন, সে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ রেখে গেছে কি? যদি তাকে বলা হতো যে সে তার ঋণ পরিশোধের মতো সম্পদ রেখে গেছে, তখন তার জানাজার নামাজ আদায় করতেন। নতুবা বলতেন, তোমাদের সাথির জানাজা আদায় করে নাও। পরবর্তী সময়ে যখন আল্লাহ তার বিজয়ের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন, তখন তিনি বলেন, আমি মুমিনদের জন্য তাদের নিজের চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। তাই কোনো মুমিন ঋণ রেখে মারা গেলে সে ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার। আর যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যায়, সে সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য। (বুখারি: ২২৯৮)

ইচ্ছাকৃত ঋণ রেখে মারা যাওয়া এতটাই বিপজ্জনক কাজ যে এর জন্য মানুষের জান্নাতে যাওয়া আটকে যায়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

মুমিন ব্যক্তির রুহ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের সঙ্গে বন্ধক অবস্থায় থাকে। (তিরমিজি: ১০৭৮)

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here