সহপাঠী থেকে শুরু করে বহিরাগত ও শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের নারী শিক্ষার্থীরা। ন্যায়বিচার না পাওয়া, আর চরিত্র হননের ভয়ে মুখ খোলেন না নিপীড়নের শিকার অনেকে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা আর একপেশে বিচারের কারণে দিনদিনই বাড়ছে এসব ঘটনা। পাশাপাশি অভিযোগেও আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীর করা যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনের মতো কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। তবে তদন্তচলাকালীন ড. নাদিরকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়ায় ক্লাসে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সম্প্রতি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল মতিনকে অপসারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নিপীড়নে পিছিয়ে নেই শিক্ষার্থীরাও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কয়েকজন শিক্ষার্থী স্বামীকে জিম্মি করে ধর্ষণ করেছে এক গৃহবধূকে। হরহামেশা নিপীড়ন হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে ২০০৯ সাল থেকে অভিযোগ করেছেন মাত্র ৩০ জন।
আর ক্যাম্পাসে অটোচালকের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও। ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে অভিযোগ করেছেন রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন করে নারী শিক্ষার্থী।
গবেষণায় উঠে এসেছে, সহপাঠীর হাতেই সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হন নারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকের মাধ্যমে নিপীড়নের শিকার হন ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ই অভিযোগ করেন না। শিক্ষার্থীরা বলছেন, অভিযোগ করলে উল্টো অভিযোগকারীকেই দোষারোপের সংস্কৃতিসহ পড়াশোনায় বড় আঘাত আসতে পারে ভেবে চুপ থাকেন অনেকেই।
শিক্ষার্থীরা বলছেন,
ধর্ষকের বিচারের পরিবর্তে ভুক্তভোগী নানা ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। বলা হয়, ‘মেয়েটা কীভাবে চলেছে, তার পোশাক কেমন ছিল, নিশ্চয় তোমার চারিত্রিক সমস্যা আছে, এক হাতে তো তালি বাজে না!’ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হয় ভুক্তভোগীকে। ফলে সমাজ ও পরিবার থেকে তার ওপর একটা অন্য ধরনের চাপ চলে আসে। এতে অনেক সময় ভুক্তভোগী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।
এছাড়া যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় একপেশে বিচারের আশংকায় অনেকেই অভিযোগ করতে অনাগ্রহী। আর অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা আর শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এ সেলে আস্থা রাখতে পারছেন না অনেক ভুক্তভোগী।
অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক সময় সংবাদকে বলেন,
প্রভাবিত হয়ে কাজ করার যে প্রবণতা এবং তদন্ত কমিটিগুলো বা যৌন নির্যাতন প্রতিরোধের সেলগুলো কার্যত অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ।
প্রতিটি অভিযোগ দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন,
আমরা কমিশন থেকে এ বিষয়ে সময়ে সময়ে মনিটরিং করছি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত, বাকিগুলো সংবিধিবদ্ধ। সেখানে আমরা খুব একটা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট সেলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে উদ্যোগী হতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি তাগিদ কমিশনের।