অনাবৃষ্টি ও অব্যাহত তাপপ্রবাহে এবার ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন লিচুচাষিরা। বাগানে এলে কানে বাজে টিপটপ শব্দ। আসলে এটি বৃষ্টির শব্দ নয়, লিচুর গুটি ঝরে পড়ার শব্দ। প্রকৃতির বিরূপ আচরণে বাগানি এবং কৃষকরা অনেক চেষ্টা করেও থামাতে পারছেন না গুটিঝরা।
দিনাজপুরে মৌসুমের শুরুতে মুকুলে পরিপূর্ণ ছিল লিচু বাগান। প্রতিটি মঞ্জুরি মুকুলে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু গুটি আসার সময় থেকে অব্যাহত তাপপ্রবাহে মঞ্জুরিগুলো শুকিয়ে তামাটে রং ধারণ করেছে। গুটি ঝরে লিচুর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর এতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় আছেন লিচুচাষিরা।
দিনাজপুরের বাগানগুলোতে এবার মাদ্রাজি, বোম্বাই, কাঁঠালি, চায়না, চায়না থ্রি, আর বেদানার প্রচুর মুকুল এলেও বৈশাখে তীব্র তাপপ্রবাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে পুড়ে যাচ্ছে গাছের মুকুল, ঝরে পড়ছে নতুন গুটি।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত সেচ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না লিচুর গুটি। চোখের সামনে সব গুটি ঝরে যাচ্ছে। কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না বাগানি-কৃষকরা। লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে এখন আসলের দুশ্চিন্তায় তারা।
সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম এ বছর লিচুর ৩টি বাগান কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে সব গুটি ঝরে যাচ্ছে। কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে এখন আসল ঘরে আনার দুশ্চিন্তায় আছি।’
একই উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের লিচুচাষি জাকির হোসেন জানান, তার বাগানে মাদ্রাজি, বোম্বাই ও বেদানা জাতের লিচু গাছ আছে। অব্যাহত তাপপ্রবাহ আর প্রখর রোদে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের গাছের লিচুই বেশি ঝরছে।
চাষিরা লিচু রক্ষায় বাগানে সেচ ও গাছের পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ লিচু রক্ষার জন্য গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন।
সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচুচাষি আজিজ হোসেন জানান, তার বাগানে ছোটবড় মিলিয়ে শতাধিক লিচুর গাছ আছে। প্রথম অবস্থায় প্রায় প্রতিটি গাছেই ব্যাপক মুকুল আসায় এবার লিচু নিয়ে বেশ লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু গুটি আসার মোক্ষম সময়ে তীব্র রোদ আর গরমের কারণে পুড়ে গেছে গাছের অনেক মুকুল এবং এখন ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। এ অবস্থায় ফলন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
আরেক লিচু চাষি জানান, মাদ্রাজি ও বোম্বাই জাতের লিচু গাছে এবার ব্যাপক মুকুল আসে। বর্তমানে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বোম্বাই লিচুর গাছে মোটামুটি ভালো গুটি থাকলেও মাদ্রাজি জাতের লিচু গাছের বেশিরভাগ মুকুল রোদে পুড়ে গেছে।
বিরল উপজেলার মাধববাটি গ্রামের এক চাষি বলেন, ‘লিচুকে কেন্দ্র করেই এ অঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল। কিন্তু প্রকৃতির এ বিরূপ আচরণে এবার লিচুর ফলন নিয়ে শঙ্কায় আছি। প্রতিকূল এ আবহাওয়ার কারণে এবার লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
লিচুর গুটি রক্ষায় বাগানে নিয়মিত সেচ ও গাছে ওষুধ প্রয়োগ করতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আনিসুজ্জামান।
দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় ৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।