প্রবাসী ভোটাধিকার শুধু কাগজেই

0
115

দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চালিকাশক্তি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সোয়া কোটিরও বেশি মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত। বিদেশবিভুঁইয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এসব প্রবাসী বছরে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। কিন্তু দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে এই বিপুলসংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারছেন না। যদিও পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্রেই বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকরা সংসদে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে নিজের ভোট ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের ভোট ক্ষমতা প্রয়োগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন। তবে প্রক্রিয়ায় নানা গরলের কারণে সুফল মিলছে না। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরির কথা কমিশন বললেও প্রচার-প্রচারণার অভাবে বিষয়টি প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন তুলতে পারেনি। ইসি অবশ্য গতকাল মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অক্টোবর মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। বিবিসির সূত্রমতে, ২০২২ সালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে হুন্ডি ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রবাসীরা আরও প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন নাগরিক ভোটার। তার মধ্যে প্রায় সোয়া কোটির বেশি কর্মসূত্রে প্রবাসী, যা মোট ভোটারের প্রায় ১৫ শতাংশ। আসনভিত্তিক এই সংখ্যা যে কোনো আসনের ভোটের ফল নির্ধারণে ভূমিকা পালন করতে পারে। এদিকে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দিলে তাকে ভোটের অধিকারও দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ২৭ অনুচ্ছেদের (১) এর (গ) মোতাবেক বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি ভোটার ডাকযোগ (পোস্টাল) ব্যালটে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ভোট প্রদান করিতে পারিবেন। কিন্তু অতীতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে প্রচারণার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এজন্য আরপিও এর ২৭ অনুচ্ছেদের (২) অনুযায়ী, নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার তারিখ হইতে পনেরো দিনের মধ্যে এবং (খ) অনুযায়ী, তিনি যে নির্বাচনী এলাকার ভোটার, সেই এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ডাকযোগে ব্যালটে ভোট প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি ব্যালট পেপারের জন্য আবেদন করিবেন এবং অনুরূপ প্রত্যেক আবেদনে ভোটারের নাম, ঠিকানা এবং ভোটার তালিকায় তাহার ক্রমিক নম্বর সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকিবে।

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর গত ১৬ নভেম্বর এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রিস, আলবেনিয়া ও মাল্টা প্রবাসীদের এ তথ্য জানায় গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণের বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।

তথ্যমতে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর বসবাস। সেখানকার একাধিক প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণের বিষয়ে তারা এখনো কিছুই জানেন না। সিলেটের কানাইঘাটের প্রবাসী দুলাল চৌধুরী। গত ১৫ বছর ধরে সৌদির জেদ্দা প্রবাসী তিনি। নির্বাচনকালীন সময়ে দেশে থাকতে পারেন না। কিন্তু প্রবাসীদের ভোট প্রয়োগের সুযোগের অভাবে তিনিও ভোট না দেওয়ার আক্ষেপে পোড়েন। পোস্টাল ব্যালটে জাতীয় পরিচয়পত্র আছে—এমন প্রবাসীদের ভোট প্রদানের সুযোগ করেছে নির্বাচন কমিশনা। এ লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচারণার কথা বলা হলেও তিনি জানেন না। একই কথা জানিয়েছেন জেদ্দার অন্য প্রবাসী আব্দুস সত্তার। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার এই প্রবাসী বলেন, দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণ করার বিষয়ে কোনো প্রচারণার তথ্য এখনো শুনিনি। একই কথা জানিয়েছেন বাহরাইনের মানামা শহরের প্রবাসী সাগর হাওলাদার। সিঙ্গাপুর প্রবাসী ইমরান, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাসকারী রায়হান, মো. আরিফুর রহমান নিশ্চিত করেছেন, তাদের কিংবা পরিচিতজনদের কেউ প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি কিংবা প্রচার সম্পর্কে জানেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে কর্মজীবী প্রায় সোয়া কোটির বেশি প্রবাসী। সার্কভুক্ত প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানেও তাদের প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডাকযোগে ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটদানের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আরপিওর ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি তিনি যে ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়ার অধিকারী, সেই কেন্দ্র ব্যতীত অন্য কোনো ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পালনে নিযুক্ত থাকলে কিংবা বিদেশে থাকলে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। এ জন্য তিনি যে নির্বাচনী এলাকার ভোটার, সেই এলাকার রিটার্নিং অফিসারের কাছে পোস্টাল ব্যালটের জন্য আবেদন করবেন। নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে বিস্তারিত তথ্যসহ আবেদন করতে হবে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া কিছুটা জটিল ও ব্যয়বহুল হওয়ায় ইসি কখনোই এটি কার্যকরে পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ প্রবাসীরা ভোট দিতে মুখিয়ে থাকেন। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার আক্ষেপে পোড়েন। এবার নির্বাচন কমিশন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। কিন্তু আগের পরিকল্পনা না থাকায় প্রবাসীদের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট নিয়ে প্রচারণা নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে আশঙ্কার বিষয়ক দেশে সুস্থ ভোটে বিশ্বাস নেই, সেখানে প্রবাসীদের ভোট কীভাবে গ্রহণ ও পরিবহন করা হবে, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। এখানে যে জালিয়াতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কতটা আছে? প্রবাসীদের ভোট স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষভাবে গ্রহণ করার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের সঙ্গে পরিচিত নয়। পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণ কার্যকর হবে যদি প্রবাসীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ২৭ ধারা অনুযায়ী, প্রবাসীরা সবসময় ই-পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারতেন। কিন্তু প্রচারণার অভাবে প্রবাসীদের মধ্যে অতীতে সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানে আগ্রহী করতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন এবং যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে—এমন প্রবাসী বাংলাদেশিরা সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পোস্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের জন্য আবেদন করতে হবে।

চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রবাসী তুর্কি নাগরিক নতুন প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় প্রতিনিধিদের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তুরস্কের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি ও লুক্সেমবার্গ, আলবেনিয়া, বেলারুশ, বেলজিয়াম, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, কসোভো, লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, মলডোভা, মন্টিনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে তুর্কি কূটনৈতিক মিশনে ভোট গ্রহণ করা হয়। দেশটির সুপ্রিম ইলেকশন বোর্ড (ওয়াইএসকে) অনুসারে, মোট ৬৪ মিলিয়নেরও বেশি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন তুর্কি বিদেশে ভোট দেওয়ার যোগ্য। এ বছর বিদেশে বসবাসকারী ১৬ লাখেরও বেশি তুর্কি নাগরিক নতুন প্রেসিডেন্ট এবং সংসদীয় প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে তাদের ভোট দিয়েছেন। দুই বছর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও আফগানিস্তানসহ বিশ্বের ১০১টি দেশে অবস্থানরত ইরানের নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এসব দেশে ভোট দিতে ৪৫০টি কেন্দ্রের ব্যবস্থা রাখা হয়। সুইজারল্যান্ডে ৯৮ শতাংশ মানুষ পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেন।

কোন দেশে কতজন বাংলাদেশি প্রবাসী

জনশক্তি রপ্তানি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রমিক ভিসায় বাংলাদেশ ছেড়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ। এই সময়ে তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ইউএস ডলার। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবশেষ ১০ বছরে অর্থাৎ ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শ্রমিক ভিসায় প্রবাসে গেছেন ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ। সবশেষ পাঁচ বছরেই শ্রমিক ভিসায় বিদেশে গেছেন সাড়ে ৩৬ লাখ বাংলাদেশি। শুধু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৬ জন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে বিদেশ গেছেন। ২০২২ সালে বিদেশগামী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩। এর আগে ২০২১ সালেও ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ বাংলাদেশি শ্রমিক অভিবাসী হয়েছেন। গত পাঁচ বছরে সৌদি আরবে গেছেন ২০ লাখ, আরব আমিরাতে ২ লাখ ১৫ হাজার, কুয়েতে ৬৬ হাজার, ওমানে ৪ লাখ ৩৫ হাজার, কাতারে ১ লাখ ২৫ হাজার, মালয়েশিয়ায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার, সিঙ্গাপুরে ১ লাখ ৯৩ হাজার, লেবাননে ৯ হাজার, জর্ডানে ৫৬ হাজার, লিবিয়ায় ৭৫০ জন, বাহরাইনে ১৫৮ জন, সুদানে ৬৫৫ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২ হাজার, যুক্তরাজ্যে সাড়ে ৭ হাজার, ইতালিতে ১ লাখ ২ হাজার ৫০০ জন, জাপানে ১ হাজার ৫৭৯ জন, মিসরে ৭৫ জন, ব্রুনাইতে ৭ হাজার ১০১ জন, মরিশাসে ১৬ হাজার ৪৮৬ জন, ইরাকে ৯ হাজার ৪২৭ জন ও অন্যান্য শতাধিক দেশে মোট প্রায় ৭৫ হাজার বাংলাদেশি জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছে। যাদের অনেকে ছুটিতে দেশে আসা-যাওয়া করলেও বেশির ভাগই প্রবাসে রয়েছেন।

বিএমইটির তথ্য আরও বলছে, শ্রমিক ভিসায় বিদেশে যাওয়া মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সৌদি আরবে (৩৫.৭৩%) রয়েছেন। এর পরই রয়েছে আরব আমিরাত (১৬.৩৯%) ও ওমানের (১১.৮২%) অবস্থান। মালয়েশিয়ায় রয়েছে মোট প্রবাসীর ৮.৮৪ শতাংশ। কুয়েতে ৪.৩৩ শতাংশ, কাতারে ৫.৫৯ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৫.৮৭ শতাংশ, বাহরাইনে ২.৬০ শতাংশ, লেবাননে ১.৭২ শতাংশ, জর্ডানে ১.৩৭ শতাংশ, লিবিয়ায় ০.৭৮ শতাংশ, সুদানে ০.০৮ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ০.৩৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ০.১১ শতাংশ, ইতালিতে ০.৫০ শতাংশ, জাপানে ০.০২ শতাংশ, মিসরে ০.১৫ শতাংশ, ব্রুনাইয়ে ০.৫০ শতাংশ, ইরাকে ০.৪৮ শতাংশ ও অন্যান্য দেশে ২.০২ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ২০টি দেশেই অবস্থান করছেন বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ শ্রমিক। এ ছাড়া ইউনেস্কোর তথ্য বলছে, প্রতি বছর গড়ে অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। অর্থাৎ তরুণ ভোটারদেরও একটি বড় অংশ প্রবাসে অবস্থান করছেন।

থমকে গেছে প্রবাসী ভোটার তৈরি

জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। কিন্তু পাসপোর্টধারী এমন প্রবাসীও কম নন। তাদের ভোটার করতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তেমন অগ্রগতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসী ভোটার করার উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী সময়ে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপে প্রবাসীদের জন্যও এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রমটির তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কালবেলাকে বলেন, তপশিলের পর নতুন ভোটার তৈরি করা যায় না। তাই যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে এমন প্রবাসীরা এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট প্রদানের জন্য আবেদন করে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here