প্রেসার নিয়ন্ত্রণে ঔষধ কি সারাজীবন সেবন করতে হবে?

0
130

প্রেসারের রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসলে তাদের মুখে একটাই প্রশ্ন থাকে যে, প্রেসার নিয়ন্ত্রণে ঔষধ কি সারাজীবন সেবন করতে হবে । আসলে প্রশ্নটা খুবই জটিল আবার সহজও। রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সাধারণত এটা কোনো রোগ নয়। আবার শুধু ওষুধ সেবন করতে হবে  বিষয়টি এমন নয়। উচ্চ রক্তচাপের অল্প কিছু কারণ বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। অধিকাংশ কারণ অজানা। এজন্য উচ্চ রক্তচাপ হলেই ওষুধ খাবেন ভালো কথা। কিন্তু কারণ না জেনে ওষুধ সেবন করলে অনেক ক্ষেত্রেই ফলাফল ইতিবাচক নাও হতে পারে। এই বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী।

তবে জনশ্রুতি আছে, উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক ওষুধ একবার খেলে সারাজীবন চালিয়ে যেতে হয়। সারাজীবন রোগী হয়ে থাকার ভয়ে অনেকেই ব্লাডপ্রেসার কন্ট্রোলের কথা ভুলে যান। ওষুধ খাওয়ার অভ্যস্ততা ত্যাগ করেন। এটি ভালো কথা নয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা থাকলে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আপনাকে ওষুধ সেবন করতে হবে সারাজীবন।

অনেক সময় স্থূলতা, ডায়াবেটিসের সঙ্গী হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ বিরাজ করে। সেক্ষেত্রে প্রেসার কমানোর ওষুধ শুধু সেবন করেই কাজ হয় না। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা সব কিছুই পরিবর্তন করতে হয়। কিডনির অসুখের কারণেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। কিডনি ধমনী সংকুচিত হয়ে গেলে কিডনি ফেইলুর, কিডনি নিকটস্থ গ্লান্ডে টিউমার হলেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগ আবিষ্কার করা সম্ভব হলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রক ওষুধ নিয়মিত সেবনের ফলে অনেক সময় রক্ত চাপ কমে আসতে পারে। ডায়রিয়া, অধিক বমি এসব কারণেও রক্তচাপ কমে আসতে পারে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের ডোজ কমিয়ে এনে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

বিস্ময়কর হলেও সত্য, অনেকের আবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিষয়টি সুনিশ্চিত করে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা নিতে হবে। এই বিশেষ অবস্থাটিকে আমরা চিকিৎসার পরিভাষায় হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন বলে থাকি। প্রেসার নিয়ন্ত্রক পিল অনিয়মিতভাবে এবং অপর্যাপ্ত পরিমাণে সেবন করলে স্ট্রোক, কিডনি ফেইলুর এসব মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে একক মাত্রার এবং একটি মাত্র প্রেসার কন্ট্রোল পিল খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সেক্ষেত্রে একাধিকবার এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রেসার কন্ট্রোলের ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। এ অবস্থাটি রোগীর জন্য বিরক্তিকর এবং কষ্টকরও বটে। বিশেষ করে যারা বার্ধক্যে উপনীত হন তাদের পক্ষে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ওষুধ সময় ধরে সেবন করা সম্ভব হয় না।

উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকেরা মূত্রবর্ধক ওষুধ এবং অনেক ক্ষেত্রে ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শে জীবনযাত্রার কৌশল পরিবর্তন তথা ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খাবারে অতিরিক্ত লবণ তো বটেই, লবণযুক্ত খাবার যেমন শুঁটকি, লোনা ইলিশ, সালাদ এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস না থাকলে স্থূল ব্যক্তিরা জীবনযাত্রার কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ থেকে রেহাই পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পৃথকভাবে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। তবে উচ্চ রক্তচাপ যখন যে বয়সেই ধরা পড়ূক না কেন, তাকে মামুলি রোগ বলে উড়িয়ে দেবেন না। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিন।

Facebook Comments Box

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here