রোমাঞ্চকর ফাইনালে ২১ গোল, শেষ হাসি মেসির

0
187

কাতার বিশ্বকাপের কথা অন্য সবাই ভুললেও লিওনেল মেসির পক্ষে ভোলা সম্ভব হবে না। ৩৬ বছর পর নিজের দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে সপ্তম স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন মেসি। ফুটবল থেকে নিজের আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই বলে নিজেই বলেছেন অনেকবার। কিন্তু নিজের জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তলানিতে থাকা ইন্টার মায়ামির ভাগ্য বদলানোর জন্য। সেই লক্ষ্যে প্রথম চেষ্টাতেই সফল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।

রোববার (২০ আগস্ট) সকাল ৭টায় লিগস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইন্টার মায়ামি ও নাশভিল। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র হওয়া খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। ম্যারাথন পেনাল্টি শুটআউটে দুই দল ১০টি করে শট নিয়ে ফেলেছে, টাইব্রেকারে তখন ৯-৯ এ সমতায়। বাকি ছিল শুধু গোলকিপারের শট নেওয়া। দারুণ শটে গোল করলেন ইন্টার মায়ামির গোলকিপার ড্রেক ক্যালেন্ডার। এরপর প্রতিপক্ষ গোলকিপারের শট ঠেকিয়ে দলকে এনে দেন শিরোপাও। ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর ইন্টার মায়ামি টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতে নেয় ১০-৯ গোলে।

লিগস কাপের রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল নির্ঘাত অনেকদিন মনে থাকবে ফুটবল ভক্তদের। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের পর টাইব্রেকারে আবার মেসির হাসি দেখল ফুটবল দুনিয়া। আর মেসির ছোঁয়ায় নিজেদের ইতিহাসের প্রথম শিরোপা জিতল মায়ামি।

নাশভিলের মাঠ জিওডিস পার্কে হওয়া ফাইনালে শুরু থেকেই বল পায়ে রেখে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করে ইন্টার মায়ামি। ইন্টার মায়ামির পায়ে বলের দখল থাকায় নাশভিলের এ সময় চেষ্টা ছিল প্রতি-আক্রমণ থেকে সুযোগ তৈরির। দুই-একবার ওপরেও ওঠে এসেছিল তারা। যদিও তা গোল আদায়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। বিপরীতে ইন্টার মায়ামিও অ্যাটাকিং থার্ডে ছিল ভঙ্গুর। নাশভিলের রক্ষণের কড়া পাহারার কারণে বারবার হতাশ হতে হচ্ছিল তাদের। কিন্তু যদি দলে মেসি থাকে তাহলে কোন পাহারাতেই কাজ হবে না। ঠিক তাই হলো এই ম্যাচেও।

২৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ইন্টার মায়ামিকে এগিয়ে দেন মেসি। নাশভিলের ডি-বক্সের কাছাকাছি জায়গায় রবার্ট টেলরের বাড়ানো বল প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় ঠিকভাবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বল চলে আসে বক্সের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মেসির কাছে। কয়েক পা এগিয়ে শরীরের ঝাঁকুনিতে দুজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বাঁ পায়ের জোরাল শটে গোল করেন মেসি। মেসির সেই গোল তার আশপাশে থাকা নাশভিলের ৫ খেলোয়াড়ের উপভোগ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।

বিরতির পরও নাশভিলে চেষ্টা করে ম্যাচে ফেরার। অন্যদিকে ইন্টার মায়ামির চোখ ছিল ব্যবধান বাড়ানোয়। একাধিক আক্রমণ থেকে মেসিরা ব্যবধান বাড়াতে ব্যর্থ হন। ৫৭ মিনিটে সমতা ফেরায় ন্যাশভিলে। দলকে গোল এনে দেন ফাফা পিকাল্ট। কর্নার থেকে আসা বলে নিচু করে হেড নেন ফাফা। বল লাইনে দাঁড়ানো বেঞ্জামিন ক্রেমাশ্চির গায়ে লেগে ফিরে আসছিল। সেই সময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গোলরক্ষকের গায়ে লেগে ফের জালে জড়ায় বল।

ম্যাচে সমতা ফেরার পর দুই পক্ষই এগিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ৭০ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে আরেকটি ট্রেডমার্ক শটে দলকে প্রায়ই এগিয়েই দিয়েছিলেন মেসি! কিন্তু এবার মেসির মাটি কামড়ানো শটে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় গোল পোস্ট। ৭৭ মিনিটে স্যাম সারিজ ইন্টার মায়ামি গোলরক্ষক ড্রেক ক্যালেন্ডারকে ফাঁকি দিতে পারলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি নাশভিল। শেষ দিকে আরও দুটি দারুণ সেভ করে ইন্টার মায়ামিকে বাঁচান ক্যালেন্ডার। যোগ করা সময়ে গোল পেতে পারত মায়ামিও। কিন্তু তারাও পারেনি বল জালে জড়াতে। এরপর নির্ধারিত সময়ে দুই দলই চেষ্টা করেছিল গোল আদায়ের। কিন্তু পায়নি কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা। ম্যাচ চলে যায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারের প্রথম শটটি নিতে আসেন মেসিই। ঠাণ্ডা মাথায় গোলরক্ষককে উল্টো দিকে পাঠিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তবে এরপর দুই দলই একটি করে পেনাল্টি মিস করে। ৫ শটের পর সমতা থাকে ৪-৪ এ। এরপর ম্যারাথন পেনাল্টি শুটআউটে ১০–৯–এ জয় পায় মায়ামি।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here