শীতে বাতের ব্যথার লক্ষণ ও করণীয়

0
18

শীতকালে আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা বাড়ে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় দীর্ঘ সময়ে এক পাশে শুয়ে থাকার কারণে হাড় ও অস্থিসন্ধিতে চাপ পড়ে। এতে শরীরে ব্যথা হয়। তাই বাতের ব্যথার লক্ষণ ও তা দূর করার উপায় জানাটা এ শীতে জরুরি।

সাধারণত শীতে দেহের সবচেয়ে জরুরি অঙ্গগুলোকে গরম রাখতে হার্টকে বেশি কাজ করতে হয়। তাই সারা শরীরে এসময় ব্যথা বাড়ার প্রবণতাও থাকে। এ ব্যথা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন দারুণ কাজ করে।

চিকিৎসাশাস্ত্রে বাতের ব্যথাকে বলা হয় আর্থ্রাইটিস। মূলত এ রোগ অস্থিসন্ধির একটি গুরুতর সমস্যা। অনেকেই মনে করেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের একটি ভ্রান্ত ধারণা। কারণ, এ রোগ যেকোনো বয়সেই শরীরে হানা দিতে পারে।

উপসর্গ

চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর অস্থিসন্ধিতে তীব্র যন্ত্রণা হয়, মাংসপেশিতে দেখা দেয় ফুলে ওঠা ও জড়তার মতো সমস্যাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থ্রাইটিস রোগটি শুধু শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের যন্ত্রণার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বরং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কারণে হাড়ে ব্যথার পাশাপাশি হতে পারে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতাও। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও অনেকটা কমতে শুরু করে।

চিকিৎসকরা বলছেন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যায় প্রাথমিক পর্যায়ে হাড়ে প্রদাহ ও ব্যথা বাড়ে। যন্ত্রণা দেখা দেয় হাত, কবজি ও পায়ের অংশে। তবে রোগের প্রকোপে এটি চোখ, ত্বক, ফুসফুস, হৃদ্‌যন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি এমনকি রক্তনালিতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তাই আপনার বাতের ব্যথা অন্যান্য জটিল রোগ কিংবা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষতি সাধন করবে কি না, তা বোঝার জন্য অবশ্যই বাতের ব্যথার বিপজ্জনক উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।

বিপজ্জনক উপসর্গ

এ রোগের বিপজ্জনক উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথার সঙ্গে ক্ষুধামন্দা, জ্বর, অনিদ্রা, ক্লান্তিবোধ, হাত-পা অবশ অনুভূত হওয়া, হাত-পায়ের জোর কমে যাওয়া, চোখ সামান্য লাল হয়ে যাওয়া এবং হাত-পায়ে টান অনুভব করা।

করণীয়

শরীরে এসব উপসর্গ দেখে দিলেই সতর্ক হতে শুরু করুন। মনে রাখবেন, বাতের ব্যথার এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন এনেই এ সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জিনিউজের প্রতিবেদন অনুসারে এগুলো হলো-

১। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট শরীরচর্চা করুন। অথবা আধা ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। অন্যদিকে শরীরের ব্যথা কমে।

২। শীতের কারণে হঠাৎই ব্যথা বেড়ে গেলে ব্যথা সারাতে ফিজিওথেরাপির সহায়তা নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদ বা ভেষজ তেলে ( কালোজিরা, ওলিভ অয়েল, সরিষা তেল, রসুন একসঙ্গে প্যানে গরম করে তৈরি করে নিতে পারেন বিশেষ আয়ুর্বেদ বা ভেষজ ম্যাসাজ তেল) শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গে ম্যাসাজ করতে পারেন।

৩। চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি আকুপাংচারকে কাজে লাগাতে পারেন। তবে এ পদ্ধতি অনুসরণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

৪। সুপরিকল্পিত ডায়েট অনুসরণ করে শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চেষ্টা করুন। অনেক সময় শরীরের অত্যধিক ওজন ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৫। তাৎক্ষণিক ব্যথা কমাতে খুব ভালো কাজ করে আদার রস, আদা চা। আদা কুচি চিবিয়ে খান, রান্নায় আদা ব্যবহারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।

৬। শরীরের ব্যথা কমাতে ভিটামিন সি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবারের জুরি নেই। তাই এসময় ডায়েটে প্রাধান্য দিন সামুদ্রিক মাছ, টুনা মাছ, বাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড, সয়া নাগেট ইত্যাদি খাবারগুলোকে।

৭। এক টানা বসে থাকবেন না। অফিসে বসে কাজ করতে হলেও মাঝে মাঝে ব্রেক নিন। হাঁটাহাঁটি করুন। কোমর, পায়ের স্ট্রেচিং করুন। এ অভ্যাস না থাকলেই ধীরে ধরে শীতে আপনার শরীরে ব্যথার পরিমাণ বাড়তে শুরু করবে।

৮। জুতোর সঙ্গে কোমর-হাঁটুর ব্যাথার সম্পর্ক আছে। যা অনেকেরই অজানা। তাই চেষ্টা করুন সঠিক মাপের ভালো মানের জুতো পরার। জুতো কেনার সময় নজর রাখুন নরম কুশন-যুক্ত সোল-এ র দিকে।

৯। শীতে খাবারে প্রাধান্য দিন প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও ফলমূল। ব্রকোলি, গাজর, বিনস্, অঙ্কুরিত ছোলা খান বেশি পরিমাণে। দুধ হজম হলে রোজই তা খেতে পারেন। ডিমও খান নিয়মিত। এতে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম-এর ঘাটতি পূরণ হবে।

১০। ব্যথা কমাতে নিজের ইচ্ছা মতো কোনও ওষুধ বা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে শুরু করবেন না। চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খান।

ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থেকেও অনেক সময় কোমর-হাঁটু বা শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হয়ে থাকে। তাই একজন চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী ইউরিক অ্যাসিডও পরীক্ষা করিয়ে নিন। যদি দেখেন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকে সেক্ষেত্রে এড়িয়ে চলুন টম্যাটো, কাবুলি ছোলা, মুসুর ডালের মতো খাবার।

Facebook Comments Box

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here