সব সূচকেই সতর্কবার্তা

0
155

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৯১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর টানা ৯ বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশের বেশি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। দুই অঙ্কে শুরু হওয়া মূল্যস্ফীতি এক পর্যায়ে সাড়ে ৫ শতাংশের নিচে নেমেছিল। ডলারের বিপরীতে টাকার অবস্থান ছিল সুসংহত। লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া না গেলেও রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের নেওয়া ঋণ জিডিপির তুলনায় সহনীয় ছিল। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যও স্বস্তিদায়ক ছিল। একমাত্র বিনিয়োগ পরিস্থিতি ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকই ইতিবাচক অবস্থানে ছিল।

এ কারণে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) উদীয়মান অর্থনীতির তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ ছিল সবার ওপরে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডিস ও এসঅ্যান্ডপির ঋণমানেও ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান ছিল।

অর্থনীতির সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে একের পর এক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে সরকার। এতে বাজেটের আকার ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানো যায়নি। ফলে প্রতি বছরই ঘাটতি বেড়েছে। আর সেই ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে বিভিন্ন দেশ ও বহুজাতিক সংস্থা এগিয়ে আসে। এতে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হলেও বাজেটে ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের বাড়তি চাপ পড়ে। এক পর্যায়ে সরকারের আর্থিক সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করে।

তা সত্ত্বেও অব্যাহত ছিল সামষ্টিক অর্থনীতির ঊর্ধ্বমুখী গতিধারা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ঠিক তখনি বিশ্বজুড়ে আঘাত হানে মহামারি করোনা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও লাগে বড় রকমের ধাক্কা। কৃষি, শিল্প ও সেবা—প্রধান তিন খাতেই মহামারির প্রভাব পড়ে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সব মিলিয়ে অর্থনীতির গতি অনেকটাই থমকে যায়। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে।

মহামারির পর নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১০ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। এর মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে সৃষ্ট মন্দা বাংলাদেশকে গ্রাস করে। জ্বালানি, খাদ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ সব ধরনের পণ্যের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিসহ নানা সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতি। সেইসঙ্গে বিনিয়োগে ধীরগতি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের অস্বস্তি, সরকারের ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারের নিম্নগতি এবং আর্থিক খাতে সুশাসনের ঘাটতি মিলিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়ে অর্থনীতি। নানা চেষ্টার পরও এখন পর্যন্ত সেই সংকট কাটেনি।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ কালবেলাকে বলেন, ‘নানা কারণে দেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মুখে পড়েছে। প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমুখী। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আর্থিক খাতের ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছে। এজন্য অর্থনৈতিক বেশকিছু কারণ থাকলেও সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার। ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীদের ক্ষমতা শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। দেশের ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের জন্য যারা দায়ী, মানুষ তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা দেখতে চায়। কিন্তু সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেই। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’

উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ছন্দপতন:

করোনার ধাক্কায় থমকে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নানামুখী প্রণোদনার ব্যবস্থা করে সরকার। এতে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়, যার প্রতিফলন ঘটে জিডিপিতে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ (৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ) হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। পরেরবার (২০২১-২২) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে এর পরই অর্থনীতিতে মন্দাভাব শুরু হয়। চূড়ান্ত হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ হারে। মহামারির সময় বাদ দিলে প্রবৃদ্ধির এই হার গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির এই নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে আভাস দিচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। যদিও চলতি অর্থবছর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার।

লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আসছে না:

প্রতি বছর বাজেটের আকার যে হারে বাড়ছে, সে অনুযায়ী রাজস্ব আদায় বাড়ানো যাচ্ছে না। এ কারণে প্রতি বছরই বড় আকারের বাজেট বাস্তবায়নে হোঁচট খাচ্ছে সরকার। এবারও পরিস্থিতি বদলায়নি। গত মার্চ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর। এই সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। অবশ্য লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি থাকলেও রাজস্ব আয়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে শেষ তিন মাসে এনবিআরকে দেড় লাখ কোটি টাকা আয় করতে হবে।

এ বিষয়ে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের সক্ষমতা বেশ চাপের মধ্যে আছে। এর কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনায় রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ বিষয়ে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।’

বেড়েই চলেছে বাজেট ঘাটতি:

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম (২০০৯-১০) অর্থবছরে ১ লাখ ১০ হাজার ৫২০ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ঘাটতির এই অঙ্ক তখনকার জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এতে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ১৫ বছরে বাজেটের আকার বেড়ে ৬ দশমিক ৮৯ গুণ হয়েছে। বিপরীতে ঘাটতি বেড়েছে ৮ দশমিক ৮৪ গুণ।

ব্যাংকে বাড়ছে সরকারের দেনা:

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। তার মানে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ১২ গুণ বেড়েছে। অবশ্য এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া আগের ঋণের ১৯ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে ১০ মাসে নেওয়া নিট ঋণ ছিল ৪৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। এদিক থেকে হিসাব করলে আবার সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ব্যাংক থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছিল সরকার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর ফলে ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি হয় এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ কমে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতি প্রবৃদ্ধিকে আঘাত করতে পারে।’

বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে:

কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ওপর বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ২০২ কোটি ডলার। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে ২৭৯ কোটি ডলার ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম ৯ মাসেই (জুলাই-মার্চ) এই অঙ্ক ২৫৭ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে শেষ পর্যন্ত এই ব্যয় ৩২৮ কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই অঙ্ক দাঁড়াবে ৪১৮ কোটি ডলারে।

রপ্তানিতে ভাটা, স্বস্তি রেমিট্যান্সে:

বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা অস্থিরতার মধ্যেও গত এক দশকে দেশের রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে কিছুদিন ধরে এই খাতেও ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম। যদিও তা আগের বছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।

গত এপ্রিল মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কম এসেছে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনো যে সংকট চলছে, তাতে অর্থবছর শেষেও রপ্তানিতে খুব ভালো কিছু আশা করা কঠিন।

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেক উৎস প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ (রেমিট্যান্স)। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এ খাতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৯১০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের এ অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৫৭ কোটি ডলার। তার মানে রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। শুধু এপ্রিল মাসে এ প্রবৃদ্ধির হার ২১ শতাংশের বেশি।

রিজার্ভ নিম্নমুখী:

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি। আর বর্তমানে সেই রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলার।

দুশ্চিন্তার নাম মূল্যস্ফীতি:

নানা চেষ্টা করেও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে পারছে না সরকার। ১৪ মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের আশপাশে আছে। এর মধ্যে সর্বশেষ এপ্রিলে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তবে এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ।

বিনিয়োগ থমকে আছে:

নানাভাবে চেষ্টা করেও দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো যাচ্ছে না। দেশীয় ও বিদেশি— দুই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত এক দশক ধরে মোট বিনিয়োগ জিডিপির ৩১ থেকে ৩২ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৪ শতাংশের কাছাকাছি আটকে আছে। অথচ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বেসরকারি বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ খাতে বিনিয়োগের হার ছিল ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এ হার ২৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ লক্ষ্য পূরণ হওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

চাপ বাড়াচ্ছে আইএমএফ:

বাজেট ঘাটতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে আগামী তিন বছরে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে এ ঋণের দুই কিস্তি পেয়েও গেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য এ মাসেই দুপক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। বরাবরের মতোই ঋণ পাওয়ার জন্য আইএমএফের দেওয়া বেশ কিছু শর্ত মানতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর অংশ হিসেবে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে ভর্তুকি কমিয়ে দিচ্ছে সরকার। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ও ডলারের দামও বাড়ানো হয়েছে। আগামী বাজেটে বিভিন্ন খাতের কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। এসব পদক্ষেপের ফলে সরকারের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কিছুটা কমলেও অর্থনীতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছু ইতিবাচক অর্জন সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি এখন অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা এখনো আমদানিনির্ভর। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাব পড়ছে। আবার ভর্তুকি কমাতে গিয়ে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর প্রভাবে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে অর্থনীতি বেশ চাপের মুখে রয়েছে।’

Facebook Comments Box

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here