সর্বজনীন পেনশন : তিনদিনে ২ কোটি টাকা জমা

0
161

সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম তিনদিনেই প্রায় ৪০ হাজার আবেদনকারী অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদনকারী চাঁদা পরিশোধ করে আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ব্যক্তিদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পেনশন স্কিম উদ্বোধনের পরের দুদিন গত শুক্র ও শনিবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। এ দুদিনে আরও ৩০ হাজারের বেশি মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৫০০ জনের বেশি চাঁদা পরিশোধ করে পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম তিনদিনে নিবন্ধন করেছেন ৩৯ হাজার ৯৫৭ জন। তাদের মধ্যে চাঁদা পরিশোধ করেছেন চার হাজার ৩৯০ জন। পুরো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ব্যক্তিদের পরিশোধিত মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম তিনদিনেই প্রায় ৪০ হাজার আবেদন পড়েছে। শুরুতেই মানুষের এত সাড়া পাওয়া যাবে প্রত্যাশা করিনি।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এর জন্য যে পরিমাণ জনবল দরকার, তা নিয়োগ দেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। মানুষ যেভাবে সাড়া দিচ্ছে, তাতে দ্রুতই জনবল বাড়াতে হবে। অন্যথায় এর সুষ্ঠু তদারকি কঠিন হয়ে পড়বে।

যোগাযোগ করা হলে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে শুরুতে খুব ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম তিনদিনে অর্থাৎ শনিবার পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৯৫৭ জন নিবন্ধন করেছেন এবং চাঁদা জমা দিয়েছেন চার হাজার ৩৯০ জন। তিনদিনে মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

প্রসঙ্গত, সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী) সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে তিনি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস করা হয়।

দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর হলেও ভবিষ্যতে তা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশের আওতায় আছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ কর্মক্ষম। গড় আয়ু এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বাড়তে পারে। এ কারণে একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ লক্ষ্যেই সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর উদ্যোগ নেয়।

জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মোট ছয়টি স্কিম থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘প্রবাস’, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের (বার্ষিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা আয়সীমা) মানুষের জন্য অংশ প্রদায়ক ‘সমতা’ স্কিম এ চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে।

এর মধ্যে সমতা স্কিমে ব্যক্তির দেওয়া চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ দেবে সরকার। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সুবিধামতো সময়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সি একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে সুবিধাভোগী ব্যক্তি মারা গেলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here