সুবর্ণচরে বরই চাষে সাফল্য

0
262

ইব্রাহিম খলিল শিমুল।।

বাগানের চারদিকে তাকালে শুধু বরই আর বরই। চার থেকে ছয় ফুট উচ্চতার একেকটি গাছ। ছোট থেকে বড় প্রতিটি গাছে বরইয়ের ভারে ডাল নুইয়ে পড়েছে। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে লাল আপেলের মতো। স্বাদে বেশ মিষ্টি। বরইয়ের এ বাগান গড়ে তুলেছেন নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের চরজুবিলী ইউনিয়নের কৃষক মো. এনায়েত উল্যাহ।

সে নিজ এলাকায় রৌদ্রজ্জ্বল ও উঁচু ৮০ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ জমিতে লাল শাক, মুলা, ধনিয়া, খিরা, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচামরিচ, বরবটি, শিম, টমেটো, বেগুন চাষাবাদ করে বাকি ৫০ শতাংশ জমিতে ঝুঁকি নিয়ে পরিক্ষামূলক ভাবে বল সুন্দরী বরই ও কাশ্মীরি আপেল কুল এ দুইজাতের বরই চাষ করেন। এর ব্যাপক ফলন হওয়ায় সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি। এর আগে গত বছর একই জমিতে বিভিন্ন প্রজাতের সবজি চাষ করে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করেন। এটি কৃষক এনায়েত ও তার বাবা মো. হানিফ এর সার্বক্ষণিক পরিচর্যার সফলতা বলে জানা যায়।

কৃষক এনায়েতের বাবা মো. হানিফ বলেন, এ জমিটি ইজারা নিয়ে কয়েক বছর চাষাবাদ করতেছি। গত ৪-৫ বছর এ জমিতে খিরা সহ নানান ধরনের সবজি চাষাবাদ করতাম। চলতি বছর মার্চের শেষের দিকে উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম স্যার জোরপূর্বক বিনামূল্যে ২৫০ টি বরইয়ের কলম চারা দেয়। সেই সাথে ইউরিয়া, মাড়িয়া, এমপি সারসহ নগদ কিছু টাকা দেওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে পরিক্ষামূলকভাবে এ বরই চাষকরি। রোপণের ৭ মাসের মাথায় ফল দেয়া শুরু করে। তবে গত কয়েক মাস পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে কিছুটা ফল নষ্ট হলেও রোপণের ৯ মাসের মাথায় বরই বিক্রির উপযুক্ত সময় হয়। আল্লাহর অশেষ কৃপায় গাছে ফলন দেখে আমরা খুবই খুশি।

কৃষক এনায়েত বলেন, এ উৎপাদিত বরই স্থানীয় বাজারের চাহিদা জানতে কয়েক কেজি নিয়ে বাজারে বসে খুচরা প্রতিকেজি ৯০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এমন দাম পেলে সব কুল বিক্রি করে খরচ বাবদ বাদ শেষে ২ লক্ষ টাকার অধিক লাভ করতে পারবো বলে ধারণা করছি। তবে এটি দোকানে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আশাকরি আগামীতে কৃষি অফিস থেকে আরো সহযোগীতা পেলে ব্যাপক ভাবে চাষাবাদ করার স্বপ্ন দেখছি।

অন্যান্য কৃষকরা বলেন, এখানকার আবহাওয়া ভালো থাকায় ও সঠিক পরির্চযা করার কারণে কুলের ভালো ফলন হয়েছে। প্রত্যেকটি গাছে কুলের ভরে অধিকাংশ ডাল গুলো শুয়ে পড়েছে। এ চাষে ঝুকি ও খরচ কম এবং লাভ বেশি।

বরই কিনতে যাওয়া শিমুল বলেন, এ উপজেলায় কয়েকটি বরই বাগান থাকলেও এর মত স্বযত্নে পরিচর্যা ও নিরাপত্তা সম্পন্ন বাগান সুবর্ণচরে আর কোথাও নজরে পড়েনি। বরইগুলোও ক্ষেতে দারুণ মিষ্টি। তার মতো অন্যরাও যদি ঝুঁকি নেয় তাহলে এ উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে।

উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম বলেন, কুল চাষে তার লাভ ও উৎপাদন দেখে অন্যান্য কৃষকও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমরা কৃষি অফিসের নির্দেশনায় কৃষকের স্বার্থে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এ উপজেলায় বরই চাষ করা হয় না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিক্ষামূলক ভাবে প্রায় ৫ একর জায়গায় ৭ জন কৃষককে উন্নত জাতের উচ্চ মূল্যের ফসল (ফল) উৎপাদন প্রদর্শনী দিয়েছি। এর মধ্যে কৃষক এনায়েত অন্যতম। তার সাফল্য দেখে বরই চাষের উদ্যাক্তা বাড়ছে এবং আগামীতে বরই বাগানের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এবং স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলাগুলোতেও এ সুবর্ণচরের বরই সরবরাহ করতে পারবে।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here