সারাদেশে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। ইতোমধ্যে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সর্বোচ্চ রোগী রেকর্ডেরও দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত সপ্তাহে (৫-১১ আগস্ট) সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৮ হাজার ৬০১ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির সাত হাজার ৩১০ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ১১ হাজার ২৯১ জন।
এ ছাড়া একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮০ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ঢাকা সিটির ৫৫ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরের ২৫ জন। অর্থাৎ ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কম হলেও মৃত্যু দিক থেকে এগিয়ে।
চলতি বছর ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২ হাজার ৫০৬ জন। এরমধ্যে ঢাকা সিটির ৪১ হাজার ৭০৪ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরের ৪০ হাজার ৮০২ জন।
একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৮৭ জন। এরমধ্যে ঢাকা সিটির ৩০০ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরের ৮৭ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়া ৭২ হাজার ২৮৯ জনের মধ্যে ঢাকার ৩৬ হাজার ৯৮১ এবং ঢাকার বাইরের ৩৫ হাজার ৩০৮ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যেভাবে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, তাকে ২০১৯ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে অতীতের সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এখন সর্বোচ্চ আক্রান্ত রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জুন মাস থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর মে মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে হয়তো রক্ষা পাব, না হলে ডেঙ্গু এবার মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, শক সিন্ড্রোমের কারণে বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। তাই অবহেলা না করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী নানা উদ্যোগ নিলেও কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশা নিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেনতনা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।