নববী যুগে ইলমি প্রতিষ্ঠান যেমন ছিলো

0
64

নবী যুগ থেকেই মুসলিমদের ইলমের চর্চা শুরু হয়। এরপর থেকে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন থেকে নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার থেকে সাহাবায়ে কেরাম, তাদের থেকে ক্রমে কিয়ামত পর্যন্ত চলবে এ ধারা। যেদিন ইলম শূন্য হবে সেদিন কিয়ামত হবে।

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় অবস্থানকালে দারুল আরকামে ও মদিনায় হিজরতের পর মসজিদে নববীর আসহাবে সুফফাদের মজলিসই ছিল ইসলামের জ্ঞান শিক্ষার মাদরাসা কাঠামোর প্রাথমিক রূপ।

ইলম বিলুপ্তির কঠিন পরিণতি

ইলমহীন মানুষ মৃত। ইলমওয়ালা ব্যক্তি জীবিত। যেমন মৃত মানুষের শরীরে প্রাণ নেই বলে, তাকে যেদিকে ইচ্ছে নিয়ে যাওয়া যায়, যেদিকে ইচ্ছে কাৎ করা যায়। তেমনি ইলমহীন ব্যক্তিকে শয়তান যেদিকে ইচ্ছে ধাবিত করে। তাকে শয়তান নিজের খেলনার বস্তুতে পরিণত করে। পক্ষান্তরে ইলমধারী ব্যক্তিকে শয়তান ভয় পায়। তাকে পথভ্রষ্ট করা শয়তানের পক্ষ এতোটা সহজ নয়।

এ কারণেই ইলমের বিলুপ্তি সামগ্রিক অধঃপতনের কারণ হয়। হাদিসে ইলমের বিলুপ্তি বিষয়ে জোরদার সতর্ক করা হয়েছে। যেমন-

ইলমের বিলুপ্তি ভ্রষ্টতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে

عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا، يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا، اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا، فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا ‏”‏‏.
হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার অন্তর থেকে ইল্ম বের করে উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ইল্ম উঠিয়ে নেবেন। যখন কোন আলিম বাকী থাকবে না তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা না জেনেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে, আর অপরকেও গোমরাহ করবে। (মুসলিম ১০১)

ইলমের বিলুপ্তি কিয়ামতের আলামত

أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলঃ ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞাতার বিস্তৃতি ঘটবে, মদপান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে। (মুসলিম- ৮০)

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِدُ

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের কাছে আর কেউ বর্ণনা করবেন না। আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলঃ ইলম কমে যাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে তত্ত্বাবধায়ক। (মুসলিম-৮১)

আল্লাহর নাম যতদিন থাকবে ততদিন কিয়ামত হবে না

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ: اللهُ، اللهُ “

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে যে, পৃথিবীতে ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলার মত কেউ থাকবে না। (মুসলিম-১৪৮, সুনানে তিরমিজি ২২০৭)

মাদরাসা কেন টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন?

পৃথিবী টিকিয়ে রাখতে হলে মাদরাসা টিকাতে হবে। ধ্বংসের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে ইলমে নববীর কাননগুলো সুরক্ষিত রাখতে হবে। ইলমের প্রতিষ্ঠান ও ইলমের ধারক উলামায়ে কেরামকেও টিকিয়ে রাখতে হবে। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর জ্ঞান, কোরআনের জ্ঞান, হাদিসের জ্ঞান না থাকলে কিয়ামত হয়ে যাবে।

কারণ, মাদরাসা আছে বলেইতো আল্লাহর নাম এখনো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। মক্তবের শিশুদের জবানে জবানে রব্বে কারীমের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মাদরাসা আছে বলেইতো ইলম জিন্দা আছে। কওমী মাদরাসার বরকতেই এখনো উলামা তৈরি হচ্ছে প্রতি বছর।

আর আল্লাহর নাম যতদিন থাকবে ততদিন কিয়ামত হবে না। কিয়ামত হবে না মানে? আসমানটা ভেঙ্গে পড়বে না, জমিনটা ধ্বসে যাবে না। পাহাড়গুলো তোলার মত উড়বে না। সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিগন্ত থেকে উদয় হবে।

হারিয়ে যাবে নিয়মিত পশ্চিম দিগন্তে। কিন্তু ইলম না থাকলে, উলামা না থাকলে, আল্লাহর নাম না থাকলে, ধেয়ে আসবে প্রলয়ংকারী ধ্বংস। নেমে আসবে আঁধারের অমানিশা। ঘটবে প্রলয়ংকারী কিয়ামত। এজন্য, দুনিয়া টিকিয়ে রাখার স্বার্থে হলেও মাদরাসা টিকিয়ে রাখা জরুরি।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here