ইমরান-নওয়াজের পাল্টাপাল্টি জয় দাবি, সরকার গঠন করবে কারা

0
72

পাকিস্তানের সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে দেশটির দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং ইমরান খান-উভয়ই নিজেদের বিজয়ী দাবি করেছেন।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনে (একটি স্থগিত) ভোটগ্রহণ হয় বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। কোনো দলের সরকার গঠনে প্রয়োজন হবে ১৩৪ আসন।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৬৬টি আসনের মধ্যে ২৫০টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এরমধ্যে পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯৯টি আসন। আর নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ-এন (পিএমএলএন) জয় পেয়েছে ৭১টি আসনে। বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩টি আসন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্রদের চেয়ে পিছিয়ে থেকেও বিজয় ভাষণ দেন নওয়াজ। লাহোরে পিএমএল-এনের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে দেয়া বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পিএমএল-এন সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পিএমএল-এন পাকিস্তানকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে দাবি করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতেও তার দল দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবে।

তবে ভাষণে পিএমএল-এন নেতা স্বীকার করেন সরকার গঠনের জন্য তার দল প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। জোট সরকার গঠনের জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খুব শিগগিরই আলোচনা শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে পাকিস্তানের নির্বাচনে জনগণ ভোটের শক্তি দেখিয়েছেন উল্লেখ করে একে এখন রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরান খান।

নওয়াজ শরিফের ভাষণের অল্প কিছু পরেই শুক্রবার দিবাগত রাতে (৯ ফেব্রুয়ারি) ইমরানের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা এক এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় বানানো) ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

অনুমোদিত ওই এআই বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমার প্রিয় পাকিস্তানি ভাই-বোনেরা, আপনাদের ওপর আমার পূর্ণ ভরসা ছিল। আমার বিশ্বাস ছিল আপনারা ভোট দিতে ঘর থেকে বের হবেন, আপনারা আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছেন। আর আপনাদের দেয়া জবাব সবাইকে হয়রান করে ফেলেছে।’

বক্তব্যে দাবি করা হয়, ‘আপনাদের ভোটের কারণে লন্ডন পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।’ নওয়াজ শরীফের সমালোচনায় বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘তিনি জয়ের আগেই বিজয়ী ভাষণ দিয়েছেন। এটা কোনো পাকিস্তানি মেনে নেবে না। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও তার বেকুফের মতো আচরণের সমালোচনা চলছে।’

বক্তব্যে দাবি করা হয়, বড় ধরনের জয় পাবে পিটিআই সমর্থিতরা। এর জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ দিয়ে বিজয় উল্লাস এবং শোকরানা নামাজ আদায়েরও আহ্বান জানানো হয়।

ইমরানের অথোরাইজড এআই ভাষণে আরও বলা হয়, দুই বছর ধরে চালানো চরম নিপীড়ন এবং অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আমরা ভোট দিয়েছি। আপনারা ভোটের শক্তি দেখিয়েছেন, এখন এর হেফাজত করতে হবে।

পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা কী করবেন

বিশ্লেষকরা বলছেন, তাত্ত্বিকভাবে সংসদ সদস্যরা দলমত নির্বিশেষে সরকার গঠন করতে সক্ষম। পিটিআই যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি, সেক্ষেত্রে দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা অন্য কোনো দলে যোগদান না করেও নিজেরা সংসদীয় স্বাধীনতা বজায় রাখার পথ বেছে নিতে পারেন।

সেক্ষেত্রে এটা তাদের সরকার গঠনের সুযোগ করে দিতে পারে। যদি তারা সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসন তথা ম্যাজিক ফিগার পূরণ করতে পারেন। অর্থাৎ ২৬৬ আসনের মধ্যে ১৩৪টি আসন পেতে হবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই যদি ঘটে, তাহলেও তা হবে অত্যন্ত দুর্বল একটা সরকার। কারণ স্বতন্ত্র সাংসদ যেকোনো মুহূর্তে ক্ষমতাসীন জোটকে পরিত্যাগ করতে পারেন। যার ফলে ভেঙে যেতে পারে সরকার।

স্বতন্ত্র থাকার আরেকটি অসুবিধা হলো ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংরক্ষিত আসনের যে কোটা রয়েছে তা থেকে বঞ্চিত হবেন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নারী ও সংখ্যালঘু মিলিয়ে ৭০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের জন্য এবং ১০টি সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ। যে দল সরকার গঠন করবে তাদের প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে এগুলো বণ্টন করা হয়।

পিটিআই দল হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ না পাওয়ায় দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সংরক্ষিত আসনের এই কোটার সুবিধা পাবে না। এ অবস্থায় পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, তার জন্য আরও ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here