একই পরিবারে ৪ প্রতিবন্ধী; বিপাকে স্বামী হারা মিনারা

1
1301

ইব্রাহিম খলিল শিমুল।।

‘আঁই চাইর গা হোলা মাইয়্যারে লই মেলা কষ্টের মধ্যে আছি। আঁর এই বৃদ্ধ বয়সে হোলাহাইন গোরে লই কি যেন কষ্টে আছি হেইটা আঁই জানি আর আল্লাহই ভালা জানে’

এ কথা গুলো অত্যন্ত আক্ষেপ করে ভারাক্রান্ত মনে এ কষ্টের কথা গুলো বলে ছিলেন ৬৫ বছর বয়সের বৃন্ধা মিনারা বেগম।

মিনারা বেগম, সে নোয়াখালী সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের চর মজিদ গ্রামের হাসিনা আশ্রয় প্রকল্প-২ এর মৃত সামছুল হকের স্ত্রী। প্রায় ২২ পূর্বে স্বামী হারানো এ বৃদ্ধার কাছে তার ৫ সন্তানের মধ্যে চার সন্তানই প্রতিবন্ধী হয়ে আছেন।

প্রতিবন্ধী সন্তানেরা হলেন, মো. রাশেদ (৩০), জামশেদ (২৪), আমজাদ (২২) ও শারমিন আক্তার (১৮)।

বৃদ্ধা মিনারা বেগম জানান, আমার সকল সন্তান গুলো স্বাভাবিক ভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ৭-৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে কিছু ব্যতিক্রমধর্মী লক্ষন দেখা দেয়। ধীরে ধীরে এ লক্ষণ গুলো প্রতিবন্ধী পর্যায়ে নিয়ে যায়।

প্রতিবন্ধী জামশেদ জানান, তবে এটা কোনো দুর্ঘটনা স্বীকার হয়ে বা বংশগত রোগে আমরা প্রতিবন্ধী হয়নি। কোনো এক অজানা অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে আমরা এ শারীরিক সমস্যায় ভোগছি।

ধীরে ধীরে এ রোগটি আমাদেরকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে। কিন্তু এ রোগ নির্ণয় ও এর সু-চিকিৎসা কোথাও পাচ্ছি না। এবং আদৌ এটির চিকিৎসা আছে কি না আমাদের জানা নেই।

প্রতিবন্ধী মো. রাশেদ ও আমজাদ জানাই, রাতে ঘুম হয় না। পুরো শরীর প্রচণ্ড কন কনে ব্যাথা করে। ধীরে ধীরে সারা শরীরের মাংস শুকিয়ে যায়। প্রায় সারা বছরই প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকি। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে হাটা চলা করতে পারি না।

এভাবে নানাবিধ সমস্যার কথা জানা যায়। অন্যদিকে ৮ সদস্য বিশিষ্ট এ পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় তারা চরম দারিদ্র্যতার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।

তার মধ্যে এ সরকারি আশ্রয়নে মাথা গোজার ঠায় ব্যতীত নিজস্ব কোনো ভিটেমাটি ও স-সম্পত্তি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা অন্যের সহায়তায় পরিবার চলে। চার জনের মধ্যে ২ জন প্রতিবন্ধী ভাতা ভুক্ত হয়েছেন।

সাধারণ ভাবে কিছুটা চলাচলের সক্ষম হওয়ায় জামশেদ লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ করে জানা যায়। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। হাজী মোশারেফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি-(২০১৫) পরিক্ষায় জিপিএ ৪.৮৩ পয়েন্ট এবং সৈকত সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি-(২০১৭) পরিক্ষায় ৪.০৮ পেয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন।

অন্যের সহায়তায় তার লেখাপড়া এতটুকু অগ্রসর হলেও পারিবারিক দারিদ্র্যায় আর লেখা পড়ার সুযোগ পায়নি।

এক্ষেত্রে জামশেদ জানান, আমাদের এসব কিছু বিবেচনায় সরকার যদি আমাদেরকে এ রোগ নির্ণয়, সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আমরা সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করার সুযোগ পাবো। পাশাপাশি পরিবারের হাল দরার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমার জন্য একটি সরকারি চারকরির ব্যবস্থা করলে প্রতিবন্ধী ভাই বোন সহ বৃন্ধা মাকে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে সক্ষম হবো।

মা মিনারা বেগম বলেন, জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করে আমার এ বিবাহর উপযুক্ত মেয়ে শারমিনকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা আছি। আমাদেরকে যদি সরকার একটি বিশেষ সহযোগীতা করে তাহলে খুবই উপকৃত হবো।

এবিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নরুন নবী খোকন বলেন, এ পরিবারে চার প্রতিবন্ধী বিষয়ে অবগত আছি। তার মধ্যে দু’জন ভাতা পেয়ে থাকেন। এবং বাকি দু’জনের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here