বেশ কয়েক বছর ধরেই মাধ্যমিকের ফলাফলে নিম্নগামী ছাত্ররা। চলতি বছরও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি সব ক্যাটাগরিতেই তারা পিছিয়ে। মাত্রাতিরিক্ত প্রযুক্তি আসক্তি আর ক্লাসে কম উপস্থিতিসহ পড়াশোনায় মনযোগে ঘাটতির কারণে এমন অবস্থা বলে মনে করেন শিক্ষকরা। আর বাল্যবিবাহ রোধ ও উপবৃত্তি চালুর মতো সরকারের কার্যকর পদক্ষেপে শিক্ষায় মেয়েদের অংশ নেয়া ও ফলে সফলতা — দুটোই এসেছে বলে মত শিক্ষা বিশ্লেষকদের।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো রোববার (১২ মে)। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেয়েদের তুলনায় সব সূচকেই পিছিয়ে ছেলেরা। ছাত্রীদের পাসের হার যেখানে ৮৪.৪৭ শতাংশ, সেখানে ছাত্রদের পাসের হার তিন শতাংশ কমে ৮১.৫৭ শতাংশে নেমেছে।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। এবার ৮৩ হাজার ৩৫৩ ছাত্র জিপিএ-৫ পেলেও ১৫ হাজার বেড়ে ছাত্রীদের সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৭৭৬ জনে। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে ছেলেরা।
গত বছরও ৮১.৮৮ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে, আর ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৭৮.৮৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯৮ হাজার ৬১৪ ছাত্রী; এক্ষেত্রে ছেলেদের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার কম। অর্থাৎ ৮৪ হাজার ৯৬৪ জন।
কয়েক বছর ধরেই পাবলিক পরীক্ষায় নিম্নমুখী ছেলেদের ফল। মেয়েদের ফলাফলে উচ্ছ্বসিত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাও। ফলাফলে ছেলে-মেয়ে সমতা আনার প্রত্যাশা জানানোর পাশাপাশি ছেলেদের পিছিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কেন পিছিয়ে ছেলেরা? কারণ অনুসন্ধানে জানা গেল, তথ্যপ্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, ক্লাসে কম উপস্থিতি এবং নিয়ামানুবর্তিতা ও অধ্যবসায় — কোনও ক্ষেত্রেই মনযোগ নেই ছেলেদের।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম বাহাউদ্দিন বলেন,
ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি কর্মঠ। তারা বেশি অধ্যবসায়ী। ছেলেদের ক্ষেত্রে যেটা দেখি, সেটা হলো তারা বেশি বহির্মুখী। এছাড়া মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা মোবাইলে বেশি আসক্ত। এসব কারণেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ফলাফল ভালো।
‘এজন্য ছেলেদেরকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। প্রযুক্তি অবশ্যই ভালো। কিন্তু প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।
বিপরীত দিকে ভালো ফলের পেছনে মেয়েদের অধ্যবসায়ী মনোভাব বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ এবং মেয়েদের উপবৃত্তির আওতায় আনায় মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশ নেয়া বেড়েছে বলেও মনে করেন তারা।
সেই সঙ্গে ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীরা কী করছে? কোনো অপরাধে জড়াচ্ছে কি-না — অভিভাবকদের সেদিকে নজর রাখার পাশাপাশি সৃজনশীল কাজে শিক্ষার্থীদের অংশ নেয়া বাড়ানোর আহ্বান তাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন,
সাংবিধানিক একটা দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ-সুবিধায় নারীদের এগিয়ে রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে গত দুদশক ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে, যেগুলো খুব ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। যেমন মেয়েদের উপবৃত্তি ও বাল্যবিবাহ রোধের কর্মসূচিসহ নানা কারণে মেয়েরা এখন আগের চেয়ে বেশি বিদ্যালয়মুখী।
‘আর সাইকোলজিক্যাল দিক থেকে বলতে পারি, মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অনেক শান্ত এবং অধ্যবসায়ী। রাষ্ট্রের নানা সুবিধা নিয়ে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। যেভাবে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমাদের দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা থাকবেই’, যোগ করেন এই অধ্যাপক।