নোয়াখালী-লক্ষীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝুঁকি নিয়ে বেইলি ব্রিজ পারাপার

0
106

নোয়াখালী-লক্ষীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের খালের ওপর স্থাপিত বেইলি ব্রিজটি মরিচা ধরে পাটাতন ভেঙে গেছে। এতে ব্রিজটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা থেকে লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলায় যাতায়াতের সংযোগ ভুলুয়া খালের ওপর স্থাপিত একমাত্র বেইলি ব্রিজ এটি। রামগতি উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায় ৩০ বছর পূর্বে ভুলুয়া নদীর ওপর এ বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য ৮০মিটার প্রশস্ত ৩ মিটার। এই ব্রিজটির ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত হালকা ও ভারী যানবাহন নোয়াখালী ও লক্ষীপুর চলাচল করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এর মেরামত কাজ না করায় ব্রিজটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। মরিচা ধরে ব্রিজের পাটাতন ভেঙে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

রামগতি উপজেলার চররমিজ গ্রামের অটোরিকশাচালক আহছান উল্যা (৩৫) বলেন, অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে এই ব্রিজ পারাপার সম্ভব না। রিকশার চাকা মরিচা ধরা স্টিলের পটাতনের ফাঁক দিয়ে ঢুকে আটকে যায়। এতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে অটোরিকশা চালকদের আয় অর্ধেক কমে গেছে।

চররমিজ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাহাব উদ্দিন (৪০) বলেন, ভুলুয়া নদীর ওপর ৩০ বছর আগে এই বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের দক্ষিণ অঞ্চলের লোকজনের যাতায়াতের পথ চররমিজ ইউনিয়নের এই বেইলি ব্রিজটি। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ব্রিজটির পাটাতনে মরিচা ধরে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ছিদ্র হয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মালবাহী পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে কচ্ছপ গতিতে পার হয়। রিকশা কিংবা মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারে না। হেঁটে লোকজন চলাচল করে থাকে। এতে করে ঝুঁকি বাড়ছে। অপচয় হচ্ছে সময়।

সুপারী ব্যবসায়ী উপজেলা চর রমিজ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আবু তাহের (৪৫) বলেন, সুবর্ণচরে ব্যবসার সুবাধে এই ব্রিজ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করতে দুর্ভোগের শিকার হই। ব্রিজটি সংস্কার অথবা পুনরায় নির্মাণ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় দুই উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে।

সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ খসরু বলেন, ব্রিজটি সুবর্ণচর ও রামগতি উপজেলার মধ্যে চলাচলকারী একমাত্র ব্রিজ। এটি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ও রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের সীমানায় পড়েছে। এই ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ভারী পণ্যবোঝাই ট্রাকসহ নানা প্রকার যানবাহন অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ব্রিজ ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ ও জীবনের ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো সময় ব্রিজের মরিচা ধরা পাটাতন, রেলিং ভেঙে যানবাহন খালে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী এই বেইলি ব্রিজ ভেঙে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জরুরি ভিত্তিতে ব্রিজটি ভেঙে পাকা সেতু নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম ব্রিজটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, চলতি অর্থবছরে বেইলি ব্রিজটি সংস্কারের জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। খুব দ্রুত ব্রিজটি মেরামতের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বেইলি ব্রিজটি ভেঙে পাকা ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। প্রকল্প পাস হলে নির্মাণকাজ শুরু হবে।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here