ভোটকেন্দ্র বাড়ছে সব জেলায়

0
183

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ হচ্ছে। এদিন সারা দেশের জেলা প্রশাসন কার্যালয়, জেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এবং উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে একযোগে ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করা হবে। মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত অনেক জেলায় ভোটকেন্দ্রের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। কুমিল্লা, পিরোজপুর ও বরিশালসহ অনেক জেলায় আজ ডিসির সভাপতিত্বে জেলা কমিটির বৈঠকে খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এর পরই তা জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হবে।

আরও জানা গেছে, সব জেলায় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকার ২০টি আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে তিন হাজার ৪৩টিতে, যা গত নির্বাচনে ছিল দুই হাজার ৯১৩টি। অনেক জেলায় রাজনৈতিক বিবেচনায় কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন ও নতুন ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে কতটি কেন্দ্র পরিবর্তন হয়েছে ওই সংখ্যা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।

ভোটকেন্দ্রের খসড়া নিয়ে কথা বলতে নারাজ ইসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে ইসির কর্মকর্তারা নিজেরাই নীতিমালার আলোকে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করতেন। বর্তমান কমিশন নতুন নীতিমালা তৈরি করে সেখানে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের কাজে জেলা পর্যায়ে ডিসি, পুলিশ এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও, ওসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। নতুন ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা আছে নীতিমালায়। এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে গলদগর্ম হচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

এ ছাড়াও চলমান বৃষ্টি, উপকূলীয় এলাকায় বন্যার কারণেও ভোটকেন্দ্র সরেজমিন দেখা কষ্টকর ছিল। মূলত এসব কারণে অনেক জেলায় গতকাল পর্যন্ত খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে ওইসব জেলায় আজ ডিসির সভাপতিত্বে বৈঠকের পর খসড়া প্রকাশ করা হবে। তারা আরও বলেন, সম্প্রতি অনেক জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন করা হয়েছে। তাদের বিষয়টি বুঝে উঠতে সময় লেগেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম যুগান্তরকে বলেন, খসড়া ভোটকেন্দ্র ১৬ আগস্ট (বুধবার) প্রকাশ করা হবে। তবে কিছু জেলা খসড়া তালিকার কাজ শেষ করতে পারেনি। সেগুলোতে উপজেলা কমিটি ভোটকেন্দ্রের তালিকা জেলা কমিটিতে পাঠিয়েছে। বুধবার ওই তালিকা নিয়ে জেলা কমিটি সকালে মিটিং করে বিকালের মধ্যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করবে। তিনি বলেন, খসড়া তালিকায় কত সংখ্যক ভোটকেন্দ্র থাকবে সেই সংখ্যা আমরা পাইনি। মাঠ পর্যায় থেকে নির্দিষ্ট ছকে আমাদের কাছে সংখ্যা পাঠাবে। তারপরে এ সংখ্যা জানাতে পারব।

ইসি জানায়, আজ প্রকাশিত খসড়ার ওপর কারও দাবি, আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জানানো যাবে। ওইসব দাবি, আপত্তি ও অভিযোগের ওপর আগামী ১১ সেপ্টম্বরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি শেষে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠাবেন ইসির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ভোটগ্রহণের ২৫ দিন আগে সেগুলো চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র হিসাবে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

বাড়ছে ভোটকেন্দ্র : মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় জেলায় বাড়ছে ভোটকেন্দ্র। আগের নির্বাচনগুলোতে ব্যবহার হওয়া অনেক কেন্দ্রও পরিবর্তন করে নতুন স্থাপনায় ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হচ্ছে। ঢাকা জেলার ২০টি আসনের খসড়া তালিকায় তিন হাজার ৪৩টি ভোটকেন্দ্রের নাম প্রকাশ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ জেলায় ভোটকেন্দ্র ছিল দুই হাজার ৯১৩টি। এবার ১৩০টি নতুন ভোটকেন্দ্র যুক্ত হচ্ছে এ জেলায়। ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনের খসড়া তালিকায় ভোটকেন্দ্র ৪১৭টি। গত নির্বাচনে এ জেলায় মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০০টি। এবার ১৭টি ভোটকেন্দ্র বাড়ছে। দিনাজপুর জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের ভোটকেন্দ্র ৮৩০টি; যা আগের নির্বাচনে ছিল ৭৯১টি।

ফরিদপুর জেলার চারটি আসনের খসড়া তালিকায় ৬৫৩টি ভোটকেন্দ্রের নাম প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি। এর সঙ্গে আরও একটি কেন্দ্র বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। সেটি যুক্ত হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৫৪টি। যদিও গত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৬৪৯টি। ফেনীর তিনটি সংসদীয় আসনে ৪১৮টি ভোটকেন্দ্রের নামের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ আসনে আগে ছিল ৪১৮টি। একইভাবে খাগড়াছড়ি জেলার খসড়া তালিকায় স্থান পাচ্ছে ১৯৪টি ভোটকেন্দ্র। এ জেলায় আগে ছিল ১৮৭টি।

সূত্র আরও জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। ওই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। ইসির তথ্য অনুযায়ী এবার তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৯২ লাখ। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতি তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিন হাজারের বেশি ভোটার এলাকার জন্য একাধিক ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। সে কারণে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে।

এছাড়া রাজনৈতিক তদবিরের কারণেও কয়েক স্থানে কয়েকটি ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নে তৈকর্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাটিরাঙ্গা উপজেলার সদর পৌরসভায় মাটিরাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে নতুন কেন্দ্র হিসাবে খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এর কারণ হচ্ছে, ওই দুই ভোটকেন্দ্র এলাকায় বর্তমানে ভোটার সংখ্যা যথাক্রমে চার হাজার ২৮১ জন ও পাঁচ হাজার ৬১ জন। ভোটার সংখ্যা বাড়ার কারণে নতুন এ দুটি কেন্দ্র যুক্ত হয়েছে।

প্রস্তুতির ঘাটতি যেখানে : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক জেলায় খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা গতকাল পর্যন্ত প্রস্তুত করতে পারেনি জেলা কমিটি। এর একটি হচ্ছে কুমিল্লা। এ জেলায় গত ১০ জুলাই জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে বৈঠক করেও চূড়ান্ত করা যায়নি। আজ বিকাল ৪টায় আবারও বৈঠক বসবে। ওই বৈঠকে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

বরিশাল জেলার ভোটকেন্দ্রের খসড়াও গতকাল পর্যন্ত শেষ হয়নি। একই অবস্থা পিরোজপুর জেলারও। এ জেলায় আজ মিটিং করার পর তালিকা চূড়ান্ত হবে। একই ধরনের অবস্থা খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুরের কয়েকটি জেলার।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here