মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আসে দেশটির কুখ্যাত সেনাবাহিনী। কিন্তু এতদিন জোর জবরদস্তির মাধ্যমে দেশ শাসন করে এলেও ক্ষমতার তিন বছরের মাথায় প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সামরিক জান্তারা।
মিয়ানমারজুড়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে গণতন্ত্রপন্থিরা। এ প্রতিরোধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে নতুন একটি জোট। এরা সেনাবাহিনী তাতমাদোকে রীতিমতো কোণঠাসা করে ফেলেছে।
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নেতারা বলছেন, তাদের এখন একমাত্র লক্ষ্য জান্তা সরকারের পতন। তবে এ গোষ্ঠী ছাড়াও আরও বেশ কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাদের অধিকার আদায়ে জোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী কতগুলো
মিয়ানমারে গত প্রায় সাত দশক ধরে জাতিগত সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন চলে আসছে। এখন থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন নামে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। কারেন জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় আন্দোলন শুরু করেন তারা। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে।
মিয়ানমারের শাসকদল আর সেনাবাহিনীতে বর্মি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। দেশটিতে বর্মি নাগরিকের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬৮ শতাংশ। বাকি ৩২ শতাংশের মানুষ ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর। সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মিরা দেশটির ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকার দিতে অস্বীকার করায় একের পর এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে।
স্বাধীনতার এক বছর পরই অর্থাৎ ১৯৪৯ সাল থেকে মিয়ানমারে অসংখ্য নৃগোষ্ঠী সশস্ত্র প্রতিরোধ লড়াই শুরু করেছিল। মূলত বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্যই তারা লড়াই করে।
এ সময়ের মধ্যে কারেন, কাচিন, পা-ওহ, শান, সোম, কেরেনি, আখা, কোকাং, পালাং, ওয়া, মংলা, লাহু, আরাকান, চিন, কায়ান ও নাগা নৃগোষ্ঠীর মধ্যে কমপক্ষে ৫৩টি বিদ্রোহী বাহিনী ও দল গঠিত হয়। এসব বাহিনী নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠীর অধিকার দাবি করেছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মি সরকার তাদের অধিকার পুরোপুরি দিতে চায়নি।
১৯৫৮, ১৯৬৩, ১৯৮০, ১৯৮৯, ১৯৯০ ও ২০১১ সালে বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন ও সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও শান্তি আসেনি দেশটিতে। উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
২০১৩ সালে মিয়ানমার পিস মনিটরের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, দেশে প্রায় ৫০টির বেশি জাতিগত সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে, যার মধ্যে বিপ্লবী সশস্ত্র দল, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সরকার-সমর্থিত মিলিশিয়া এবং ছোট বিদ্রোহী দল রয়েছে।
ইতিহাসবিদদের মতে, রোহিঙ্গাদের নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় তাদের বাদ দিয়ে মিয়ানমারে মোট ১৩৫টি নৃগোষ্ঠী রয়েছে। এদের মধ্যে তুলনামূলক শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। শান রাজ্যের শান আর্মি, তাং ও ওয়া আর্মিরাই প্রধান বিদ্রোহ গোষ্ঠী, যারা দীর্ঘদিন ধরে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে।
তবে এদের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। যেখানে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে অন্তত তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জোটবদ্ধ হয়েছে।
ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাম্প্রতিক সংঘাত বুঝতে হলে সেখানকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজিকে বুঝতে হবে। এনইউজি হলো জান্তাবিরোধী একটি সমান্তরাল প্রশাসন।২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের কয়েক মাস পর সেপ্টেম্বরে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী কর্মী ও রাজনীতিবিদরা মিলে এটি গঠন করে। এনইউজির পক্ষে মিয়ানমারে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এই সরকারের প্রতিনিধিত্বমূলক কার্যালয় রয়েছে।
ইউনাইটেড ইন্সটিটিউট অব পিস-এর তথ্য অনুযায়ী, কারেন, কাচিন, কারেন্নি ও চিন — এরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রশাসন এনইউজির সাথে সম্পৃক্ত।
বিশ্লেষকদের মতে, এনইউজি হচ্ছে মিয়ানমারের এক ধরনের ‘নির্বাসিত সরকার’। অর্থাৎ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে এমন একটি সরকার গঠন করা হয়েছে, যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলেও জান্তা সরকারের বিরোধী হিসেবে সক্রিয় রয়েছে।
থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স কারা
তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে একটি জোট, যার নাম দেয়া হয়েছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। এটি থ্রিবিএইচএ নামেও পরিচিত। গোষ্ঠীগুলো হলো যথাক্রমে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি বা কোকাং এমএনডিএএ, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা তাং টিএনএলএ এবং আরাকান আর্মি (এএ)।
এ তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জোটবদ্ধ হয় ২০১৯ সালে। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা এমএনডিএএ ও আরাকান আর্মির শক্ত ঘাঁটি শান ও রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর ওপর জোর দেয়। এই তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এনইউজিকে সমর্থন দিচ্ছে।
আরাকান আর্মি (এএ)
আরাকান আর্মির সদস্যরা মূলত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা। কিন্তু এরা ব্যাপক আকারে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং এদের নিয়েই গঠিত হয়েছে আরাকান আর্মি। বর্তমানে মিয়ানমারে এরা সবচেয়ে বেশি অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আরাকান আর্মির ভাষ্য অনুযায়ী, তারা রাখাইন রাজ্যে একাধিক জাতিগোষ্ঠীর আরাকানিদের সার্বভৌমত্ব অর্জনের লক্ষ্য লড়াই করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাও অন্তর্ভুক্ত।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতির তথ্য অনুযায়ী, আরাকান আর্মির শক্তিশালী অনেক ব্যাটালিয়ন আছে এবং এদের অধীনে প্রায় ৩০ হাজার সেনা সক্রিয়।
ইতিহাসবিদরা বলছেন, আরাকান আর্মি হচ্ছে রাখাইন নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। এটা মূলত একটি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ সশস্ত্র বাহিনী। থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় এবং প্রশিক্ষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী।
মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ)
চীন সীমান্তের উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্যে পরিচালিত হয় মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ)। গোষ্ঠীটির মতে, তারা স্থানীয় কোকাং জাতিগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, গত ২০ বছর ধরে এমএনডিএএর হাতে শান রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
২০০৯ সালে এ গোষ্ঠীকে রাজ্যটির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়ে সীমান্ত রক্ষাবাহিনী হওয়ার নির্দেশ দেয়া হলে সামরিক বাহিনীর সাথে তাদের সংঘাত শুরু হয়। দ্য ইরাবতির তথ্য মতে, এমএনডিএএর অধীনে চারটি ব্রিগেড এবং ছয় হাজারের মতো সেনা রয়েছে।
তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)
পাহাড়ের ওপর ছোট ছোট গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি। এটিও প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। টিএনএলএ হচ্ছে রাজনৈতিক সংগঠন পালাউং সেলফ লিবারেশন ফ্রন্টের সশস্ত্র শাখা।
টিএনএলএর উত্থান হয় ১৯৯২ সালে এবং তারা বলছে যে, মিয়ানমারকে তারা একটি প্রকৃত ফেডারেল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দ্য ইরাবতির তথ্য মতে, টিএনএলএর অধীনে সাতটি ব্রিগেড ও আট হাজার সেনা রয়েছে। সব মিলিয়ে তিন বাহিনীর সেনার সংখ্যা ৪৫-৫০ হাজারের মতো। শক্তির দিক থেকে ধরতে গেলে তারা দেশে গৃহযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরা ছাড়াও আরও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী লড়াই করছে।
পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)
২০২১ সালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ব্যাপক দমনপীড়ন শুরু করে সেনাবাহিনী। নির্যাতনের কারণে গণতন্ত্রপন্থিদের বিভিন্ন অংশ নিয়ে গড়ে উঠা সশস্ত্র বাহিনী হচ্ছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স। গোষ্ঠীটি ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে।
শান রাজ্যে সামরিক বাহিনীর কোণঠাসা অবস্থার সুযোগ নিয়ে গোষ্ঠীটি শুরু থেকেই নিজেদের মতো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং জান্তা সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।
ইউনাইটেড ইন্সটিটিউট অব পিস-এর তথ্য মতে, তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নিয়ে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স বা পিডিএফ তৈরি হয়েছে। এরা হচ্ছে, পিডিএফ, লোকাল ডিফেন্স ফোর্সেস (এলডিএফ) এবং পিপলস ডিফেন্স টিম (পিডিটি)।
ইউনাইটেড ইন্সটিটিউট অব পিস জানায়, পিডিএফ-এর অধীনে প্রায় ৬৫ হাজার সেনা রয়েছে। এদের মধ্যে ২০ শতাংশের হাতে মিলিটারি গ্রেডের অস্ত্র রয়েছে এবং আরও ৪০ শতাংশের হাতে রয়েছে দেশি অস্ত্র।
২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, পিডিএফ-এর ৩০০টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে যার প্রতিটির অধীনে ২০০-৫০০ পর্যন্ত সেনা রয়েছে। আরও ৬৩টি ব্যাটালিয়ন এনইউজির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
পিডিএফ-এর বেশিরভাগ বাহিনী এনইউজির প্রতি অনুগত। তবে চিনল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), কারেন্নি ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স এবং কাচিন পিপলস ডিফেন্স ফোর্স জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীর (ইএও) অধীনে পরিচালিত হয়।
লোকাল ডিফেন্স ফোর্স (এলডিএফ)
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট অব পিস-এর তথ্য মতে, মিয়ানমারে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৪০১টি লোকাল ডিফেন্স ফোর্স বা এলডিএফ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৪টি এনইউজির সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে। ১০০টি দল যোগ দিয়েছে পিডিএফ-এর সাথে। আর বাকিগুলো পিডিটির সাথে যুক্ত হয়েছে।
স্থানীয় এসব প্রতিরক্ষা বাহিনীর বেশিরভাগই ২০২১ সালের মার্চের পর গঠিত হয়েছে। এলডিএফ-এর অধীনে প্রায় ৩০ হাজার সেনা রয়েছে। এলডিএফ মূলত সাম্প্রদায়িক ও ডায়াসপোরা জনগোষ্ঠীর দেয়া তহবিলের মাধ্যমে চলে।
পিপলস ডিফেন্স টিম (পিডিটি)
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্সটিটিউট অব পিস বলছে, পিপলস ডিফেন্স টিম গঠন করেছে এনইউজি। এরা মূলত শহরাঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে। তবে বর্তমানে তারা গ্রামীণ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে। এনইউজির তথ্য অনুযায়ী, ৩৩০টি শহরের মধ্যে ২৫০টি শহরে পিডিটি গঠন করা হয়েছে। পিডিটি মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে সাগাইং এবং মাগওয়ে এলাকায় এদের তৎপরতা বেশি। এরা মূলত দেশি হালকা অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।
ওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী
ওয়া হচ্ছে একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী যাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও ২০ হাজারের মতো সেনা রয়েছে। এদের সমর্থন দেয় চীন। ১৯৮৯ সালে তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি সই করে। এরপর থেকে তারা সাধারণত সশস্ত্র সংঘাত এড়িয়ে চলে।
জান্তা ও বিদ্রোহীদের চলমান সংঘাতে তারা নিজেদেরকে নিরপেক্ষ দাবি করে। কিন্তু দেশের অন্যান্য এলাকায় সরকার বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে যে অস্ত্র সরবরাহ করা হয় তার বেশিরভাগই এরাই করে থাকে বলে মনে করা হয়।
চিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী
ভারতের সাথে সীমান্ত এলাকায় চিন জাতিগোষ্ঠীর অবস্থান। তারা তাদের রাজ্যে বেশ প্রভাবশালী এবং সম্প্রতি তারা রিখাওদার নামে সীমান্ত শহর দখল করে নিয়েছে।
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন
মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন। তারা থাইল্যান্ডের সাথে সীমান্তে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুটগুলোতে থাকা সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে অভিযান জোরদার করেছে। সর্ব দক্ষিণের রাজ্য তানিনথারি-তে বর্তমানে সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে গোষ্ঠীটি।
কারেন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী
থাইল্যান্ড সীমান্তের কায়াহ রাজ্যে কারেন্নি নৃগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনী রাজ্যটির বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা রাজ্যের প্রধান শহর লইকাও দখলে নিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং শহরটির বাইরে থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীগেুলো অস্ত্র পায় কোথায়
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো স্থানীয়ভাবেই নিজেরা নিজেরদের সামরিক রসদ জোগাড় করে নেয়। তবে অস্ত্র আসলে তাদেরকে বৃহৎ কোনো শক্তি সরবরাহ করে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
অস্ত্র জোগানের বিভিন্ন সমর্থিত ও অসমর্থিত সূত্রে বলা হচ্ছে, চীন থেকে অস্ত্রের সরবরাহ পায়। আর এটা আসে তান, ওয়া, কাচিন ও আরাকান আর্মির মাধ্যমে।
ইউনাইটেড স্টেটস ইন্সটিটিউট অব পিস-এর এক নিবন্ধ মতে, বেশিরভাগ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো প্রথম হাতে তৈরি অস্ত্র দিয়ে লড়াই শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে বন্দুক, গ্যাস রাইফেল এবং হাতে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র।
সংস্থাটি আরও বলেছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো অস্ত্র সহায়তা দেয়নি। এর পরিবর্তে এসব গোষ্ঠী স্থানীয় সশস্ত্র নৃগোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র এবং কালো বাজার থেকে কেনা অস্ত্রের ওপরই বেশি নির্ভর করে।
এনইউজির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইন্সটিটিউট অব পিস তাদের নিবন্ধে জানায়, এনইউজি প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে এবং এর বেশিরভাগ অংশই সশস্ত্র প্রতিরক্ষা বাহিনীর অর্থায়নে ব্যয় করা হয়েছে।
সংস্থাটির তথ্য মতে, মিয়ানমারে সারা দেশে ৭০টিরও বেশি অস্ত্র কারখানা রয়েছে, যেগুলো থেকে উৎপাদিত অস্ত্র স্থানীয় চাহিদার ৩০ শতাংশ মেটায়।
পিডিএফ-এর ৬০ শতাংশ সেনা সশস্ত্র হলেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মাত্র ৫০ শতাংশ সেনার হাতে অস্ত্র রয়েছে। আর এদের বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নিম্নমানের অস্ত্র। বেশিরভাগ সেনার কাছে কৌশলগত অস্ত্র যেমন গোলাবারুদ, আকাশ প্রতিরক্ষা অস্ত্র এবং সাঁজোয়া যান বিধ্বংসী কোন অস্ত্র নেই।
আকাশ প্রতিরক্ষা অস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সীমিত আকারে যুদ্ধে জড়ানোর মতো সক্ষমতা রয়েছে। যে কারণে গ্রামীণ বা দুর্গম এলাকায় গেরিলা কৌশলে যুদ্ধে জয় পেলেও শহরাঞ্চলে জান্তা বাহিনীর মোকাবেলা করা কষ্টকর হয়ে পড়বে বিদ্রোহীদের পক্ষে।