প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কিংবা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অভিযান; কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না ভেজাল সেমাই তৈরির কারখানাগুলোতে। অভিযানের খবর পেলেই গা ঢাকা দেয়। পরে আবারও শুরু হয় সেমাই তৈরির কাজ। চাঁদপুরে তৈরি এসব লাচ্ছা সেমাইয়ের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। এখন ঈদকে কেন্দ্র করে কারখানাগুলো ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। তবে উৎপাদিত সেমাইয়ের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। শ্রমিকরা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। কারখানার পরিবেশও নোংরা। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
চাঁদপুর শহরের পুরানবাজারে সেমাই তৈরির কারখানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের অভিযান। আর তা দেখে পালিয়ে যায় শ্রমিকরা। তারপর কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি মিম ফুড নামে সেমাই তৈরির এ কারখানার মালিক পক্ষকেও।
শুধু এমন একটি নয়, চাঁদপুরের পাইকারি এ ব্যবসা কেন্দ্রের সেমাই তৈরির অনেক কারখানাতেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। নোংরা পরিবেশে শ্রমিকরা খালি হাতেই তৈরি করছেন এসব সেমাই।
মিম ও আলম ফুডসহ আরও কয়েকটি কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা খালি হাতে তৈরি করছেন সেমাই। আর শ্রমিকদের শরীর থেকে ঘাম ঝরে পড়ছে সেমাইতে।
প্রশ্ন করা হলে একজন জানান, মালিক যেভাবে কাজ করতে বলেছেন। আমরা তাই করছি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তাদের সাফ জবাব, সেটাও মালিক দেখবে।
জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন কারখানার মালিক দাবি করেন, ‘ভালো পরিবেশেই তো সেমাই তৈরি হচ্ছে। আমরা তো আর পচাবাসি বিক্রি করছি না। প্রতি ৫০০ গ্রাম সেমাই মাত্র ১০০ টাকা। অথচ নামীদামী কোম্পানিগুলো তা বিক্রি করে কয়েকগুণ বেশি দরে।’
কয়েকদিন পরই ঈদুল ফিতর। ফলে চাহিদা থাকায় সেমাই তৈরির কারখানাগুলোতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। তবে তাদের বেশির ভাগই মৌসুমি শ্রমিক। সেমাই তৈরি জানলেও নেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা জ্ঞান। ফলে নোংরা হাতের ছোঁয়ায় উৎপাদন হচ্ছে এসব লাচ্ছা সেমাই। তাতে ব্যবহার হচ্ছে মানহীন ডালডা আর পোড়া তেল। এই নিয়ে সরাসরি জবাব না দিয়ে কয়েকটি কারখানার মালিক জানায়, দামে সস্তা হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায়ও সরবরাহ হচ্ছে।
এদিকে, নামীদামী কোম্পানির চেয়ে উৎপাদন খরচও কম। তাই নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে চাঁদপুরের সেমাইয়ের চাহিদা বেশ। তবে মান রক্ষা করে সেমাই তৈরির বিষয়ে সচেতন থাকতে বলেছেন চাঁদপুর চেম্বার এন্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক তমাল ঘোষ।
অন্যদিকে, মান এবং পরিবেশ ঠিক আছে কিনা; এমন পরিবেশ দেখতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মাঝেমধ্যে অভিযান চালায় কারখানাগুলোতে। এরইমধ্যে রোজার শুরু থেকে এই পর্যন্ত ৫টি সেমাইয়ের কারখানায় অভিযান চালিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
প্রতিষ্ঠানটির চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক নূর হোসেন রুবেল জানান, মাছি, তেলাপোকা, পোড়া তেল ও নোংরা পরিবেশের জন্য এমন অভিযান চালানো হলেও পরবর্তীতে আবারও এসব কারখানায় গেলে দেখা মেলে পুরোনো সেই চিত্র।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাহাদাৎ হোসেন জানান, মানসম্মত না হলে এসব সেমাই খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন ক্রেতারা। সুতরাং কর্ম পরিবেশ উন্নত এবং ভেজালমুক্ত সেমাই প্রস্তুতের তাগিদ দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরের পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র পুরানবাজারে মৌসুমের এ সময় সেমাই তৈরি করে, এমন কারখানার সংখ্যা ১০টি।