আরিফুর রহমান।।
তীব্র গরমে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এক গ্লাস মহিষের দই পান করে দেখুন। নিমিষে মিটে যাবে সমস্ত ক্লান্তি, রসনায় আসবে তৃপ্তি। তবে সঙ্গে চিনি বা গুড় মিশিয়ে নিতে ভুলবেন না। বিয়ে, জন্মদিন বা যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে রয়েছে মহিষের দইয়ের দারুন কদর।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, ফেনী, কুমিল্লা ও যশোরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মহিষের দই যাচ্ছে এ অঞ্চল থেকে।
নোয়াখালীর অনেক অঞ্চলে মহিষের দই তৈরি হলেও খ্যাতি পেয়েছে সুবর্ণচর ও হাতিয়া। দুই অঞ্চলের ৮৫ শতাংশ মানুষই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি মহিষের উৎপাদিত একমাত্র কাঁচা দুধ থেকে তৈরি হয়। নোয়াখালীর বিভিন্ন চরাঞ্চলের লোনা পানি এলাকায় রাখালরা মহিষ লালন-পালন করে এবং কিছু এলাকায় মহিষের খামার করে উদ্যোক্তারা মহিষ পালন করে থাকে। সেখান থেকে গোয়ালরা উৎপাদিত মহিষের দুধ সংগ্রহ করে পৌছে দেয় সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন বাজারসহ দই ব্যবসায়ীদের কাছে।
সুবর্ণচর উপজেলার ভূঁইয়ার হাট বাজারের দই ব্যবসায়ী মহি উদ্দিন জানান, প্রতিদিন দুপুরে গোয়ালরা মহিষের দুধ দোকানে দিয়ে যায়।
এ কাঁচা দুধ মাটির টালি ও পাতিলে ঢেলে হালকা গরম জায়গায় রেখে দেয়। একদিন পর সেই দুধ বসে পরিনত হয় সু-স্বাধু খাবার টকদইয়ে।
এক কেজি ওজনের এক পাতিল দধি বিক্রি হয় ১৮০ থেতে ১৯০ টাকা এবং বড় আড়াই কেজি ওজনের দধি বিক্রি হয় আড়াইশ থেকে ৩ শত টাকা দরে। তবে হঠাৎ করে বেশী দধির প্রয়োজন হলে পাওয়া যায়না। আগে থেকে অর্ডার দিতে হয়। এসব মহিষের দুধ থেকে তৈরি হচ্ছে দই। কয়েক শত পরিবার দইয়ের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত হলেও এ বিষয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই।
সারা বছর চাহিদা থাকলেও সাধারণত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস ছাড়াও রমজান মাসে মহিষের দইয়ের ব্যপক চাহিদা থাকে পুরো নোয়াখালী জুড়ে।
এ সুস্বাধু খাবারটি এখানকার প্রতিটি মিষ্টি ভান্ডার ও দধি ভান্ডার গুলোতে সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। আর ক্রেতারা এসে এ সকল ভান্ডার থেকে দই ক্রয় করে নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে যায়।
স্থানীয় ক্রেতা মোহাম্মদ মুছা মিঞা বলেন, আমাদের সুবর্ণচরে বড় যে কোন অনুষ্ঠানের খাবারের বিশেষ আর্কষন হচ্ছে মহিষের দই। এ এলাকার প্রতিটি পরিবারে খাবারের সাথে মিশে আছে এ মহিষের টকদই। বিয়ের অনুষ্ঠানসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে খাবারের শেষে এ দই পরিবেশন করা হয়। চিনি বা গুড় দিয়ে দই খেতে খুব সু-স্বাদু বলে এর বেশ চাহিদা এখানে।
মহিষের দই সম্পর্কে চরজব্বার ডিগ্রী কলেজের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ারা বেগম বলেন, মহিষের দুধ থেকে তৈরি দইয়ে উচ্চমাত্রার ক্যালশিয়াম ও প্রোটিন থাকে।এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
সুবর্ণচরের এ টক দইয়ে থাকে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ক্রিম এবং মাখম।এটি খাবারের হজম শক্তি বাড়ায়। শুধু তাই নয়, এটি মানব দেহের মহোঔষধ। মানুষর শরীররে ব্যাক্টেরিয়া জনিত বহু রোগ নিরাময়ের একমাত্র কার্যকরি ভুমিকা রাখে বলেও ডাক্তাররা মন্তব্য করেন।