একজন প্রখ্যাত বিদগ্ধ আলেমেদ্বীনের প্রস্থান

0
329

নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা গ্রামের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মরহুম জনাব এটিএম লুৎফুর রহমান স্যার গত ১২/১২/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ রোজ মঙ্গলবার সকাল ৮.৩০টার সময় ইহকালীন মায়া ত্যাগ করে পরকালীন জগতে মহান প্রভুর দরবারে চলে যান। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

স্বল্পভাষী, মিষ্টভাষী ও সততার এক  মূর্ত প্রতীক ছিলেন মরহুম এটিএম লুৎফুর রহমান।নির্ঝঞ্ঝাট ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী এ মানুষটি ছিলেন এলাকার সাধারণ মানুষের অতি আপনজন। জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা  বুদ্ধিমত্তা ও মানবিকতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন  এক অনন্য উচ্চ স্বকীয়তায়।

“এমন জীবন করিবে গঠন, মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন”  এ কবিতার মতোই ছিল তার জীবন। সেটার বাস্তব প্রতিফলন দেখেছে জানাজায় অংশগ্রহণকারী দূরদূরান্ত থেকে আগত বিভিন্ন ধর্মপ্রাণ মানুষজন।কনে কনে শীতের রাতে অধীর অপেক্ষায় থেকে ওনার শুভাকাঙ্ক্ষী ও শুভানুধ্যায়ীরা দোয়ায় শরীক হয়েছেন।

এ ক্ষনজন্মা মানুষটি ১৯৪২ সালের ১৪ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন পূর্ব চরবাটা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর বাবা হযরত মাওলানা হাবিবুর রহমান ছিলেন সাজলি তরীকার একজন খেলাফত প্রাপ্ত বুজুর্গ্। সারা জীবন ওয়াজ মাহফিল সভা -সমাবেশের মাধ্যমে ওলামা -মাশায়েখসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে ইসলামী দাওয়াত ও নসিহত পৌঁছানোর পবিত্র কাজে নিবেদিত ছিলেন তিনি। ওনার বাবা মরহুম হাবিবুর রহমানের নামেই এলাকাটি (হাবিবিয়া) নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি ও প্রসিদ্ধতা অর্জন করে।

মরহুম মাওলানা লুৎফুর রহমান ৮১ বছর ০৭ মাস ২৯ দিনে ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কর্মময় জীবনে সর্বশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এই বিদ্বান মানুষটি একাধারে ছিলেন শিক্ষক, মসজিদের খতিব ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন পরিচালনার কর্ণধার। সুবর্ণচর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য  হিসাবে পরহেজগার এ আলেমেদ্বীনের উপস্থিতি সংগঠনটিকে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব জনাব এটিএম আতাউর রহমানের মেজ ভাই ছিলেন মরহুম জনাব এটিএম লুৎফুর রহমান। দুই ভাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এলাকার সুধীজনদের নিয়ে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য নিরলস ভাবে বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কাজ করে গেছেন।পূর্ব চরবাটা গ্রামের প্রতিষ্ঠা করেন বিভিন্ন আলোর প্রদীপ—

#পূর্ব চরবাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ (এসএসসি ভোকেশনাল কোর্স ও এইচএসসি বিএমটি কোর্স সহ)

#চরবাটা হাবিবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

#হাজী আব্দুর রহমান জামে মসজিদ

#মডেল মসজিদ পাঠাগার

#পূর্ব চরবাটা সমাজ কল্যাণ পাঠাগার‌

#হাবিবিয়া পাবলিক ঈদগাঁও ও কবরস্থান

#হাবিবিয়া কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র (শিশু এবং বয়স্কদের জন্য পৃথক পৃথক)

#মহিলাদের জন্য আলাদা মহিলা মসজিদ

#পূর্ব চরবাটা হাবিবিয়া স্বাস্থ্য ক্লিনিক

রাক্ষুসে মেঘনার কুল কুল নোনা জল ও ঘোলা জলের ভাঙ্গা গড়ার বুকে জেগে উঠা পূর্ব চরবাটা গ্রামের গরিব ,দুঃখী, মেহনতি ,ঝড়- জঞ্জাটে লড়াই করা সংগ্রামী মানুষগুলোর জন্য শিক্ষা দীক্ষায়, জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আলোয় আলোকিত করে যাচ্ছে সমাজের শোষিত, বঞ্চিত নিষ্পেষিত মানুষগুলোকে।

নিরহংকার, নির্লোভ ও প্রচার বিমুখ এ মানুষ গুলো এতগুলো সামাজিক প্রতিষ্ঠান করা সত্ত্বেও নিবৃত্তচারী হয়েই রয়ে গেলেন। কারণ একটাই সাদকা যারিয়াহ হিসেবে তাদের এই কাজগুলো যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করেন এটাই তাদের পাওনা।

যেন কোন অবস্থাতে দাম্ভিকতা ,অহমিকা এবং রিয়া গ্রাস করতে না পারে এবং নেক নেককাজ গুলো নষ্ট করে দিতে না পারে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সমাজের মানুষের জন্য কিছু করতে পারাকে দায়িত্ব বলেই মনে করতেন।

সদালপী, বিনয়ী এ মানুষটি উপরে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্ব পূর্ণ দায়িত্ব পালন করার স্বার্থে কেউ বলতে পারবেনা উচ্চস্বরে  কথা বলেছেন। সুবিবেচনাবোধ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণে তিনি ছিলেন অটুট। আমরা ওনার সন্তান তুলল্যের চেয়ে ছোট হওয়ার পরেও স্নেহ বলবো? নাকি শ্রদ্ধা বলবো? এরকম সম্মান দিয়ে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। অমায়িক সুন্দর ব্যবহার দিয়ে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন সবাইকে।

শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার পরও এত সুন্দর করে বড় বড় কেরাত দিয়ে সালাত পড়াতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। আলহামদুলিল্লাহ উনার সুললিত শুদ্ধ উচ্চারণের কুরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ থাকতেন সকল মুসল্লিরা। ভীষণভাবে মিস করছি সবার শ্রদ্ধেয় ও পরম প্রিয় বড় হুজুর নামে খ্যাত মরহুম এটিএম লুৎফুর রহমান স্যারকে। প্রতিটি মোনাজাতে ঈমান এবং আমলের সাথে মৃত্যু কামনা করতেন। মহান রাব্বুল আলামিন বড় হুজুরের সেই দোয়াটি মনে হয় কবুল করেছেন।

মৃত্যুকালে মরহুম লুৎফুর রহমান  ছয় ছেলে, এক কন্যা সন্তান, নাতি নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী, শুভানুধ্যায়ী রেখে যান। ছয় ছেলের সবাই বাবার ধর্মীয় অনুশাসনে স্ব মহিমায় প্রতিষ্ঠিত-

১ম জন মিজানুর রহমান, একজন প্রতিষ্ঠিত চাকরিজীবী

২য় জন মিনহাজুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ফোর এম সোর্সিং লিমিটেড)।

৩য় জন জাহিদুর রহমান, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার,দৈনিক সমকাল।

৪র্থ জন মুসাদ্দিকুর রহমান  ব্যবস্থাপক, প্রিজম বাংলাদেশ।

৫ম জন আরিফুর রহমান, সাংবাদিক ও প্রদর্শক কম্পিউটার।

৬ষ্ঠ জন হাফেজ সাইফুর রহমান ফয়সাল পেশ ইমাম, হাজী আব্দুর রহমান জামে মসজিদ।

এ পৃথিবী বড়ই স্বার্থপর কর্মকে রাখে কর্মীকে নয়। মহান রাব্বুল আলামীন মানুষের কর্মের হিসাব নিবেন। মরহুম লুৎফুর রহমান মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন তার সকল ভাল কাজের কারনে। ঈমান ও নেক আমলের মাধ্যমে যেন আমাদের নাজাতের উসিলা হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা জানাযা অংশ গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন ওলামা-মাশায়েখ, শিক্ষকবৃন্দ,ছাত্রবৃন্দ, এলাকার সুধীজন, রাজনীতিবিদ, হাবিবিয়া বাজার কমিটির সদস্যবৃন্দ,ঢাকা থেকে আগত  দৈনিক সমকালের উপ-সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ জনাব সাহেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল,নোয়াখালী জেলার সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল, সাংবাদিক আব্দুল বারী  বাবলুর নেতৃত্বে সুবর্নচর উপজেলার সাংবাদিকবৃন্দ,ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের নিকট আন্তরিক  ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here