এ বছর থেকে মেট্রোরেলের সুফল পাবে বইমেলাও!

0
117

স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে রাজধানীবাসীর কাছে বেজায় স্বস্তির নাম মেট্রোরেল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উত্তরা থেকে মতিঝিলের সব স্টেশন চালুর পর থেকে যাত্রীদের ভিড়ও বেড়েছে বহুগুণ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঠিক সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করেন নতুন করে চালু হওয়া এ যানে। এবার থেকে এর সুফল পাবে বইমেলাও।

আর কদিন পরই শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলায় যুক্ত হচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। কেননা, বইমেলা প্রাঙ্গণের পাশেই রয়েছে মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন। যার জন্য এবারের মেলায় বইপ্রেমীদের আসা-যাওয়ায় সুবিধা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উত্তরা থেকে মতিঝিলে মেট্রোরেল চলার সময় এখন সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। এদিকে বইমেলার সময়সূচি সাধারণত বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের সময়সূচির সঙ্গে বইমেলার সময়সূচি মিলে যাওয়ায় এবার মেট্রোতে করে প্রচুর মানুষের আগমন ঘটবে মেলায় – এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ ছুটে আসবে প্রাণের এ উৎসবে। আগে রাস্তাঘাটে জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ার ভয়ে মানুষ বেরই হতে চাইতো না। এবার বইমেলা প্রাঙ্গণের কাছেই মেট্রোরেল স্টেশন হওয়ায় সেই টেনশন নেই।

এ বিষয়ে বাতিঘরের প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘মেট্রোরেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। তাই আসা যাওয়া সহজ হওয়ায় অনেকে মেলায় আসবেন। উত্তরা ও মিরপুর থেকে যারা যানজটের চিন্তা করে মেলায় আসতেন না, তারাও এবার আসবেন। ফলে মেট্রোরেল বইমেলায় নতুন সংযোজন, এটা বলা যায়। মেট্রোরেলে করে টিএসসি স্টেশনে নামলেই তো বইমেলা। ফলে মানুষের প্রাণে প্রাণ মেলাবার মতো একটা মেলা হবে বলেই প্রত্যাশা।’

কথা হয় আরেক প্রকাশক ফরিদ আহমেদের সঙ্গে। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের সময় রাত পর্যন্ত বাড়ানোর কারণে এবারের বইমেলায় অনেক মানুষ আসবে। তারা মেট্রোরেল ভ্রমণও করবে, আবার বইমেলাও ঘুরে দেখতে পারবে। আশা করা যায়, এবার মেলায় যাতায়াত সুবিধার কারণে মানুষ যেমন বেশি হবে, তেমনি বইও আগের কয়েকবারের তুলনায় বিক্রি বেশি হবে।’

কথা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেনের সঙ্গে। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের সুবিধা পাবে এবারের বইমেলা। আমরাও খুব খুশি মেট্রোরেলে করে মানুষ খুব সহজে স্বল্প সময়ে বইমেলায় যাতায়াত করতে পারবে। এতে বইমেলায় মানুষের সমাগম বাড়বে। আমরা চেষ্টা করবো বইমেলার সময় মানুষ যেন নির্বিঘ্নে মেট্রো ব্যবহার করতে পারে।’

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান আলমের সঙ্গে। আরমান বলেন, ‘মেট্রোরেল হওয়াতে এখন সহজেই ক্লাস করতে চলে আসতে পারি। ক্লাস শেষে বইমেলা ঘুরে মেট্রোতে করে বাসায় চলে যেতে পারবো। আগে দীর্ঘ জ্যামের কথা চিন্তা করে এতো কাছে বইমেলা হওয়ার পরও তেমন একটা যাওয়া হতো না।’

শিক্ষার্থী ও বইপ্রেমীদের মধ্যে এবারের বইমেলাকে কেন্দ্র করে আলাদা উৎসবমুখর অবস্থা বিরাজ করছে। যার অন্যতম কারণ মেট্রোরেল। দেশের সবচেয়ে বড় এই বই উৎসব পরিণত হয় লেখক,পাঠকদের মিলনমেলায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাসব্যাপী সেমিনারসহ পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য থাকে চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন।

এদিকে, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে চলছে বইমেলার জোর প্রস্তুতি। বাঁশের খুঁটির ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে চলছে সারি সারি স্টল বানানোর কাজ। খুঁটিনাটি অঙ্গসজ্জার কাজও শুরু হয়ে গেছে কোনো কোনো স্টলে। যথারীতি ভাষার মাসের প্রথম দিন পর্দা উঠবে অমর একুশে বইমেলার।

২০২৪ সাল অধিবর্ষ, তাই ফেব্রুয়ারি জোড়া এ বইমেলা এবার হবে ২৯ দিনের। প্রতিবারের মতো এবারও ১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তালিকাভুক্ত ৬০১টি প্রকাশনা সংস্থা ছাড়াও প্রায় ৬০টি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে স্টল বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছে। এবার ২০টির বেশি নতুন প্রকাশনা সংস্থা মেলায় স্টল পেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন তিনি। বর্তমানে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল- এ ১৬ স্টেশনে মেট্রোরেল চলাচল করছে। কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলমান। ওই অংশের কাজ শেষ হলে কমলাপুরও যাবে মেট্রোরেল।

মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here