শীত মৌসুমজুড়েই চলে পিঠাপুলির আয়োজন। এ সময় বিয়ের নিমন্ত্রণও থাকে। উৎসবের আনন্দে চলে জম্পেশ খাওয়াদাওয়া। ডায়েটের দফারফা হয়ে যায়! ‘ডায়েট’ ঠিক রাখতে আপনি সংকল্পবদ্ধ হলেও কাছের মানুষের বিয়ের আয়োজনে খাবার টেবিলে হাত গুটিয়ে বসে থাকাটাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। একটি বিয়ের আয়োজনও চলতে পারে কয়েক দিন। এমন পরিস্থিতিতে ‘ডায়েট’ বজায় রাখা মুশকিলই হয়ে পড়ে। তাহলে কি অনুষ্ঠানেই যাবেন না? নাহ, সেটাও বাস্তবসম্মত সমাধান হলো না। বরং সামাজিকতা, স্বাদের চাহিদা সবকিছু পূরণ করেও কীভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেই উপায় জেনে নেওয়া যাক।
যেদিন নিমন্ত্রণ থাকবে কিংবা পিঠাপুলি খাবেন, সেদিন এবং তার পরদিনের খাবারদাবারের তালিকা এমনভাবে ঠিক করে নিন, যাতে সব মিলিয়ে ক্যালরির মাত্রাটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিমন্ত্রণে গেলে পাতে বেশ খানিকটা সালাদ নিন। সালাদের কারণে অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন। সারা দিনে পর্যাপ্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরে বাড়তি চর্বি জমার ঝুঁকিও কম থাকে। এমনটাই বলেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
শম্পা শারমিন আরও জানান, শীতের পিঠায় ব্যবহৃত চালের গুঁড়ি এবং গুড়-চিনি বাড়তি ক্যালরির উৎস। নিমন্ত্রণে গেলে পোলাওজাতীয় খাবারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমিষজাতীয় খাবার খেতে অবশ্য বাধা নেই। নিমন্ত্রণে যাওয়ার দিন কিংবা পিঠাপুলি খাওয়ার দিন সকালে আপনার রোজকার খাবার খেলেও দুপুরের দিকে খাবারে শর্করার পরিমাণটা কম রাখুন। ভাত, রুটি, আলু, মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট, চিনি হলো আমাদের পরিচিত শর্করার উৎস। বিকেলে পিঠাপুলি খাচ্ছেন? তাহলে রাতে সবজি আর ফল খান। সঙ্গে থাকতে পারে আমিষ।
খাওয়াদাওয়ার পাট
খাওয়ার অন্তত ১০ মিনিট আগে খানিকটা কুসুম গরম পানি খেয়ে নিতে পারেন। নিমন্ত্রণে গিয়ে বিরিয়ানি খেলেও খেয়াল রাখুন, যাতে শর্করাজাতীয় খাবারটা পরিমাণে কমই খাওয়া হয়। আলু নেবেন না।
মাংস খেলেও চর্বি খাবেন না। বড়সড় ফার্মের মুরগিতেও কিন্তু চর্বি থাকে। রাতের খাবার খেতে দেরি করবেন না। খেয়েদেয়েই শুয়ে পড়বেন না।
শাকসবজি, ফলমূল
সারা দিনে প্রচুর শাকপাতা আর সবজি খান। প্রচুর কাঁচা ফলমূল ও সালাদ খাওয়ার অভ্যাস রাখুন। যেদিন নিমন্ত্রণে যাচ্ছেন বা পিঠাপুলি খাওয়া হচ্ছে, সেদিন তো বটেই, তার পরদিনও এসব খাবারই বেশি করে খান। ডাঁটা, লাউ, ডাঁটাশাক, শিম, নাশপাতি, কমলা (আঁশ ও সুতার মতো বাড়তি অংশসহ) কিংবা আঁশসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার খেতে পারেন প্রচুর। লেবু, গাজর, বিট, ব্রকলি, লেটুসপাতা, ধনেপাতা এবং নানা রঙের ক্যাপসিকাম খাওয়া ভালো। এমন ধরনের খাবার খেলে শরীরে বাড়তি মেদ জমার প্রবণতা কমবে।
সালাদ বা ফলে লবণ-চিনি যোগ করবেন না। আর এটাও ভুলে যাবেন না যে টক হলেও আচার-চাটনিতে কিন্তু চিনি আছে।
পিঠাপুলি, পায়েস, গুড় ও অন্যান্য
গুড়ে বেশি ক্যালরি থাকে না, এই ধারণা ভুল। শখ করে দু-এক দিন গুড়ের চা খেলেও নিয়মিত খাবেন না। চায়ে চিনি যেমন ক্ষতিকর, তেমনি গুড়ও। একটুকরা গুড় মানেই কিন্তু বেশ খানিকটা বাড়তি ক্যালরি, আপনি তা যেভাবেই খান না কেন।
কেউ আবার হালকা নাশতা হিসেবে গুড়-মুড়ি খেতে ভালোবাসেন। এটিও কিন্তু আসলে ‘হালকা’ খাবার নয়, বরং ক্যালরিতে ‘ভারী’। গুড় আর মুড়ি দুটিই শর্করার উৎস।
পায়েসে চাল, চিনি বা গুড়ের পরিমাণ কম দিয়ে ঘন দুধের পায়েস করতে পারেন। ক্যালরির মাত্রাও থাকবে নিয়ন্ত্রণে, স্বাদও বাড়বে।
শীত, নিমন্ত্রণ, আড্ডা—এসবের ভিড়ে রোজকার শরীরচর্চার সময়টুকু হারিয়ে ফেলবেন না যেন।