দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু

0
104

দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৫৬টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮টা থেকে এ ভোটগ্রহণ শুরু হয়। যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এসব উপজেলার মধ্যে ২৪টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।

এ ধাপেও প্রচার ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত, হুমকি, আচরণবিধি লঙ্ঘন, সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের দিনও সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকে। স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করে কতটুকু সুষ্ঠু ভোট সম্ভব হবে—সেটি নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো প্রার্থী। অন্যদিকে অনেকটা একতরফা এ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ভোটারদের কতটা ভোটকেন্দ্রে আনা যাবে, তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ ও সংশয়ে রয়েছেন।

তবে সুষ্ঠু ভোটের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। ছোটখাটো যেসব সমস্যা মাঠে আছে, সেগুলো যাতে না হয়, সেজন্য প্রশাসন অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। আর প্রথম ধাপের তুলনায় দ্বিতীয় ধাপে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আশাবাদী কমিশন।

এর আগে প্রথম ধাপের নির্বাচনের জেরে গোপালগঞ্জ সদর ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার এ নির্বাচন ঘিরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. সাইদুর রহমানকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।

গত শুক্রবার সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এক প্রার্থীর দুই সমর্থক আহত হন। অনেক জায়গায় প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

সর্বশেষ গতকাল ফরিদপুরের ভাঙ্গা, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে হামলা, পাল্টা হামলা, সংঘর্ষ ও নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলা নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করে ইসি। এর মধ্যে ধাপ পরিবর্তন, মামলাসহ বিভিন্ন কারণে পাঁচটিতে এ ধাপে ভোট হচ্ছে না। বাকি ১৫৬ উপজেলায় ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১৫৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে তারা সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন। পরবর্তী ধাপগুলোর জন্যও একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেবে ইসি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, মাঠ প্রশাসন থেকে দুর্গম এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন পাঠালে নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েক বছর ধরে ভোটে কারচুপি রোধ করতে আগের রাতে ব্যালট না পাঠিয়ে সকালে পাঠাচ্ছে কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য থাকবেন। এর আগে কখনো এত বেশি সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভোটকেন্দ্রে ছিলেন না বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিটি স্বাভাবিক কেন্দ্রে অস্ত্রসহ তিন পুলিশ, অস্ত্রসহ আনসারের পিসি ও এপিসি থাকবেন তিনজন। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সশস্ত্র ছয়জন সদস্য থাকবেন।

প্রতিটি বুথ ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বনিম্ন ১০ আনসার সদস্য থাকবেন এবং ছয়টির বেশি বুথ আছে এমন জায়গাগুলোতে একজন করে অতিরিক্ত আনসার থাকবে। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্রসহ চার পুলিশ সদস্য থাকবেন। আনসার থাকবে তিনজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ২০ থেকে ২১ সদস্য থাকবেন।

এবার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। প্রতিটি উপজেলায়ও একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ভোটের আগের দিন ও পরের দিন পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। গড়ে পাঁচটি সেন্টারের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল ফোর্স থাকবে।

আনসার, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে এই মোবাইল ফোর্স গঠন করা হয়েছে। আর উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বিজিবির বদলে কোস্টগার্ড বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সব বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটা সমন্বয় সেল গঠন করা হয়েছে।

নির্বাচন-সংক্রান্ত অভিযোগ ৯৯৯ এর মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি অভিযোগ আসার পর কারা তা দেখবে, তাও ট্র্যাকিং করা হবে। নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে গতকাল থেকেই ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নেমেছে।

বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (মিডিয়া) শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রতিটি উপজেলায় দুই থেকে চার প্লাটুন দায়িত্ব পালন করবে। গত ৮ মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ভোটেও একইভাবে দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ ধাপে ১০টি অঞ্চলের ১০৬ পৌরসভার, ১ হাজার ৪৯৪ ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৩ হাজার ১৬টি। আর ভোটকক্ষ রয়েছে ৯১ হাজার ৫৮৯টি। দ্বিতীয় ধাপে মোট ভোটার রয়েছেন ৩ কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৮ জন।

নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি মোতায়েন থাকবে ৪৫৮ প্লাটুন। পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৮৯ হাজার ৮৬৩ জন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাব মোতায়েন থাকবে ২ হাজার ৭৬৮ জন। ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার সদস্য মোতায়ন থাকবে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ জন।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here