ঘড়ির কাঁটা তখন ১২টা। মুহূর্তেই কয়েকটি রিকশা এসে দাঁড়ায় চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানজি পুকুর পাড় এলাকা সংলগ্ন সড়কে। তারপর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আসেন একজন ভিক্ষুক। তাদের আসতে দেখে হকারসহ আশপাশের লোকজন জড়ো হন। তারা সবাই মিলে ভিড় জমায় একটি ভ্যানগাড়ির পাশে। সপ্তাহের ৫ দিন সেই ভ্যানগাড়ি থেকে বিতরণ করা হয় মাছ, মাংস কিংবা ডিম-খিচুরি। তাই দুপুর হলেই সেই খিচুরির সুগন্ধে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন সেখানে। ছুটে আসা এসব লোকজন স্থানীয়দের কাছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের মেহমান হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, এ চিত্র তাদের নিত্যসঙ্গী। প্রায় দুপুরে একটি ভ্যানগাড়ি থেকে ওই এলাকার গরিব, দুঃস্থসহ পেশাজীবীদের জন্য খাবার বিতরণ করা হয়। যেখানে থাকে মাছ-খিচুরি, মুরগি খিচুরি কিংবা ডিম-খিচুরি। রুচির ভিন্নতা আনার জন্য সপ্তাহে পাঁচ দিন ভিন্ন ভিন্ন মেন্যুতে খাবার প্রস্তুত করা হয়- যার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। দুপুর হলেই খিচুরি সুগন্ধে সেখানে ছুটে আসে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গাড়িচালক থেকে শুরু করে কর্মজীবী অনেকেই দুপুরে খাবার হিসেবে এ ভ্যানগাড়ি থেকে খাবার সংগ্রহ করেন। দীর্ঘদিন ধরে এ আয়োজন চলতে থাকায় অনেকেই দুপুরের খাবারটা নিয়মিত সেখানেই খেয়ে থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউসুফ কালবেলাকে বলেন, কয়েকজন লোক এসে প্রায় দুপুরে খাবারের প্যাকেট দেন। পথচারী, রিকশাচালক, স্টুডেন্ট সবাই নেন। প্রথম দিকে আমরা নিতাম না। কিন্তু পরে দেখেছি প্যাকেটগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই মাঝে মধ্যে দুপুরে আমরাও এই প্যাকেটের খিচুরি খাই।
আয়োজন সংশ্লিষ্টরা জানান, ড. হাছান মাহমুদের পারিবারিক উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এনএনকে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। মূলত ২০১২ সালের দিকে তথ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় জনসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এর যাত্রা শুরু হয়। শুধু করোনাকালে এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রাঙ্গুনিয়াতে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার খাদ্য, নগদ টাকা এবং ত্রাণ সহায়তা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে জনসেবামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে সংগঠনটি। করোনার লকডাউন চলাকালে হাছান মাহমুদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়িয়ে এ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নগরেও।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে ৯ জুলাই থেকে নগরের দেওয়ানজি পুকুর পাড়ে দুপুরের খাবার বিতরণ শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহে এক হাজার মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। মূলত করোনাকালে লকডাউনের সময় থেকে ফ্রিতে খাবার বিতরণের এ উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখন অবদি চলছে। চট্টগ্রাম নগরীতে দেওয়ানজি পুকুরপাড়েই রয়েছে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বাসভবন। এ বাসভবনের গলির মুখেই সপ্তাহে ৫ দিন দুপুরের খাবার বিতরণ করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এমরুল করিম রাশেদ কালবেলাকে বলেন, ‘মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনাকালে এ কার্যক্রম শুরু করি। বুধ ও শুক্রবার বাদে সপ্তাহে বাকি পাঁচ দিন দুপুরে নিন্মআয়ের অন্তত ২০০ মানুষের মাঝে এ খাবার বিতরণ করা হয়। আমাদের টার্গেট থাকে ইকোনমি রেটে ভালো খাবার তৈরির। প্রতি প্যাকেটে ৫০ টাকার মতো খরচ পড়ে। নিন্মআয়ের মানুষের পাশাপাশি অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও এ খাবার খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যিনি খাবার তৈরি করেন তিনি দক্ষ বার্বুচি। মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন কোনো দিন যেন এ উদ্যোগ বন্ধ করা না হয়, আমরাও সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
মন্ত্রীর নির্দেশনা ও এমরুল করিম রাশেদের নিয়মিত তদারকিতে খিচুরি তৈরিসহ সার্বিক কার্যক্রম দেখাশোনা করছেন তত্ত্বাবধায়ক মো. আইয়ুব এবং রান্নার দায়িত্বে আছেন হেকিম আলী বাবুর্চি।
আইয়ুব কালবেলাকে বলেন, যাত্রা শুরুর পর থেকে গত তিন বছরে প্রতি সপ্তাহে ৫ দিন এ আয়োজন হয়। রমজান চলাকালে ইফতারির সময়ে খিচুরির পাশাপাশি থাকে খেঁজুর-পানি, জুসসহ ইফতারসামগ্রী। তাছাড়া করোনাকালে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষের জন্য খিচুরির আয়োজন হতো।
ষাটোর্ধ্ব ভিক্ষুক মো. জামাল বলেন, ‘সপ্তাহে দুই দিন দুপুরের দিকে এ পথে যাই। গত তিন বছর ধরে এখান থেকেই খাবার খাই। আমি হাটতে-চলতে পারি না। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করি। যদি রাস্তার ওই পাশে থাকি, তাহলে ওনারই গিয়ে আমার খাবারের প্যাকেটটা দিয়ে আসেন।’