নির্বাচনী উত্তাপে ব্যস্ততা হারিয়েছে সচিবালয়

0
108

দেশে এখন জোর নির্বাচনী হাওয়া বইছে। চারদিন পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে সারা দেশ। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নিজেদের জন্য ভোট চাইছেন। কর্মী-সমর্থকরাও নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

নির্বাচনের এই আলোড়নের মধ্যেই কিছুটা উত্তাপহীন হয়ে পড়েছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। আগের মতো কোলাহল নেই। দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও কম। শীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিথিলতা এসেছে কর্মকর্তাদের কাজেও। কারণ, সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাদের একান্ত সচিব (পিএস), সহকারী একান্ত সচিবরাও (এপিএস) সচিবালয়ে আসছেন না। কক্ষগুলো খালি পড়ে আছে।

বর্তমান মন্ত্রিসভার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। বাকিরা সবাই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। যে কারণে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই তাদের অনেকেই সচিবালয়ে কম এসেছেন কিংবা আসেননি।

নির্বাচনকালীন সরকার কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করায় সচিবালয়ে ব্যস্ততাও কম। গেল ১৬ নভেম্বর সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকার রুটিন কাজ করবে। কোনো পলিসিগত সিদ্ধান্ত নেবে না, আইন প্রণয়ন করা হবে না। কারণ, সংসদ বসবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের কাজকর্ম নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্বশীলভাবে করবে। ইসির নির্বাচনের কাজে যেসব সরকারি বিভাগ, সংস্থা বা অফিস তাদের প্রয়োজন হবে এবং নির্বাচন প্রভাবিত হবে না, সেইসব তারা করবে। যে সরকার আছে, সেই সরকার গতানুতিক রুটিন কাজগুলো করে যাবে। আর গণতন্ত্রে মূল বক্তব্য যখন নির্বাচন, তখন বর্তমান সরকার রুটিন কাজ করে যাবে।

রুটিন কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে আনিসুল হক বলেন, গতানুগতিক অফিস চলা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বেতন পাওয়া, প্রতিদিনকার সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে অবশ্যই এ সরকার কাজ করবে। উন্নয়নকাজ যেগুলো আছে, সেগুলো চলমান থাকবে। তবে নতুন করে কোনো উন্নয়ন কাজ শুরু হবে না। নতুন করে কোনো প্রকল্প নেয়া হবে না। একটি দলের পক্ষে যা কিছু নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে, এ রকম কাজ আমরা করবো না।

এদিকে, মন্ত্রী-উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা কম আসায় তদবিরও কমে গেছে। কর্মকর্তাদের কাজেও এসেছে শিথিলতা। এতে কোনো কোনো কর্মকর্তাকে দেরি করে অফিসে আসতে দেখা গেছে। কাজের চাপ কম থাকায় সহকর্মীদের সঙ্গে গল্পে-আড্ডায় সময় পার করছেন কেউ কেউ।

তবে নির্বাচনের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়গুলোতে ব‌্যস্ততা রয়েছে। সেসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরাও অফিস করছেন বেশি। প্রচারণার ফাঁকে ফাঁকে অফিসে সময় দিচ্ছেন তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তাদের একজন। নির্বাচনী এলাকায় ঢাকা হওয়ায় তিনি নিয়মিত অফিসও করছেন।

টেকনোক্র্যাট দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের পর এখন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মোট সদস্য ৪৪ জন। এরমধ্যে ২৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী। ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ করা হবে।

১ জানুয়ারি একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে, যে কারণে নির্বাচনের আগে তিনি আর সচিবালয়ে আসবেন না।

তবে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অংশ নিতে কোনো কোনো মন্ত্রী সচিবালয়ে এলেও বেশি সময় থাকছেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের কারণে এলাকায় সময় দেয়ার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন মন্ত্রীরা। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বীরা যতই দুর্বল হোক, ভোটে যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।

এদিকে কাজের গতি কমেনি বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করছি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের অন‌্য কাজগুলোও চলমান রয়েছে। আমাদের গতি কমেনি।

একই সঙ্গে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের নানা কাজে তৎপর থাকতে হচ্ছে।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here