বড় পরিবর্তনের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাবর্ষ

0
108

দেশের মাধ্যমিক শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আজ পয়লা জানুয়ারি শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ উঠে যাচ্ছে। এদিকে বছরের প্রথম দিনে সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোতে বিনা মূল্যে নতুন বই বিতরণ শুরু হলেও অষ্টম ও নবম শ্রেণির প্রায় আড়াই কোটি বই ছাপানো শেষ হয়নি। ফলে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পাবে না।

বিদায়ী বছরের শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। এ বছর (২০২৪) আরও চারটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হচ্ছে। শ্রেণিগুলো হলো দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণি। আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালু হবে। এরপর ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।

আজ থেকে নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন উঠে যাচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই কোটি বই ছাপানো বাকি।

নতুন নিয়মে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিভাগ বিভাজন হবে। কারও কারও অভিমত, নতুন পদ্ধতিতে অভিন্ন বিষয় হওয়ায় নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞানের অংশ কমে যাচ্ছে। ফলে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা হোঁচট খেতে পারে। তাঁদের অভিমত, মাধ্যমিকেও দু-একটি ঐচ্ছিক বিষয় রাখা যেত।

তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি হচ্ছে আজ থেকে, মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন উঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। নতুন নিয়মে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে। এত দিন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়ে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা নামে আলাদা বিভাগ অর্থাৎ বাধ্যতামূলক কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি বিভাগভিত্তিক বিশেষায়িত কয়েকটি বিষয় পড়তে হতো।

নেই বই উৎসব, তবু নতুন বই পাওয়ার উৎসাহে কমতি নেই। বছরের প্রথম দিনই স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় নতুন বই। সে বই দেখছেন অভিভাবকেরাও। সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা,
নেই বই উৎসব, তবু নতুন বই পাওয়ার উৎসাহে কমতি নেই। বছরের প্রথম দিনই স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় নতুন বই। সে বই দেখছেন অভিভাবকেরাও। সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা,প্রথম

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন মাধ্যমিক স্তরে যত শিক্ষার্থী পড়ত, তাদের মধ্যে ১৯ শতাংশ বিজ্ঞানে পড়ত। বাকিরা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় পড়ত। আবার যারা মাধ্যমিকে বিজ্ঞান পড়ত, উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে তাদের প্রায় অর্ধেক বিজ্ঞান বিভাগ ছেড়ে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষায় চলে যেত। এখন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্কতা বাড়বে।

নতুন নিয়মে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিভাগ বিভাজন হবে। কারও কারও অভিমত, নতুন পদ্ধতিতে অভিন্ন বিষয় হওয়ায় নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞানের অংশ কমে যাচ্ছে। ফলে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা হোঁচট খেতে পারে। তাঁদের অভিমত, মাধ্যমিকেও দু-একটি ঐচ্ছিক বিষয় রাখা যেত।

তবে এই অভিমতের সঙ্গে একমত নন জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান। তিনি মনে করেন, নতুন নিয়মে গভীরতা বাড়বে। সব শিক্ষার্থীর সব বিষয়ে একটি ভিত্তি তৈরি হবে। ‘ভালো শিক্ষার্থীরা’ কেবল বিজ্ঞান পড়বে, সেই ধারণাও ভাঙবে। মাধ্যমিকেও দু-একটি ঐচ্ছিক বিষয় রাখলে শিক্ষার্থীদের ওপর উল্টো চাপ বাড়বে।

১৯৫৯ সাল থেকে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু হয়েছিল বলে জানান এম তারিক আহসান।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন হয়েছিল।

করোনাকাল ছাড়া ২০১০ সাল থেকে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দিচ্ছে সরকার। এটি এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সে অনুযায়ী আজও বছরের প্রথম দিনে দেশের বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই বিতরণ করা হবে।

এনসিটিবি সূত্রমতে, এবার সারা দেশে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজারের মতো নতুন বই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাথমিকে বই ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিক স্তরের বই ২১ কোটি ৩২ লাখের বেশি।

এনসিটিবির সূত্রমতে, প্রাথমিকের সব বই ছাপা হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিকের সব বই ছাপা হয়নি। অষ্টম ও নবম শ্রেণির মোট ১০ কোটির কিছু বেশি বইয়ের মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি বই গতকাল রোববার বছরের শেষ দিনেও ছাপা শেষ হয়নি।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণির একাধিক বিষয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি লেগে যায়। এ জন্য আড়াই কোটির মতো বই ছাপতে একটু সময় লাগছে।

তবে এই দুই শ্রেণির অধিকাংশ বই ছাপিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ বই ছাপিয়ে পাঠানো হয়েছে। ফলে বছরের প্রথম দিনেই সব শিক্ষার্থী বই পাবে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও প্রথম দিনে ছয় থেকে আটটি করে বই পাবে। এই দুই শ্রেণির অবশিষ্ট বই সর্বোচ্চ ১০ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবে।

এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) অনুমোদন না দেওয়ায় এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসব করে বই বিতরণ করা হবে না। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই বিতরণ করা হবে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকেল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘বই বিতরণ উৎসব’ হবে।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here