মেট্রোরেলে মাত্র ৩২ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল

0
113

বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর রাজধানী ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের হিসাবে এমনটাই জানা গেছে। মার্কিন সংস্থাটি ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি শহরে যান চলাচলের গতি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এ খবর। যে শহরে যান চলাচলের গতি এত ধীর, সেখানে মিনিটের কাঁটার খবর কেউ রাখে না। কোনো কাজে কেউ ‘দুই মিনিট’ লাগবে বললেও লোকজনকে বাড়তি সময় যোগ করতে হয়। অপেক্ষা করতে হয়।

তবে গত ১১ মাসে মেট্রোরেলের যাত্রীরা ঘড়ির মিনিটের হিসাবও করে চলেন। কয় মিনিটে কোথায় পৌঁছাবেন, সেটা তাঁদের মুখস্থ হয়ে গেছে এত দিনে।

আজ রোববার নতুন করে তাঁদের আবারও হিসাব কষতে হয়েছে। কারণ, আজই প্রথম মেট্রোরেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের স্টেশন পেরিয়ে ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও সবশেষ স্টেশন মতিঝিল পৌঁছেছে। যাত্রা শুরুর স্টেশন উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগেছে মাত্র ৩২ মিনিট। ভাড়া লেগেছে ১০০ টাকা। সকাল ৯টা ২০ মিনিটের মেট্রোরেল ৯টা ৫২ মিনিটে মতিঝিলের সবশেষ গন্তব্যে পৌঁছেছে।
আজ সকাল ৯টায় উত্তরা উত্তর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের ভিড় অনেক।

মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন বাড়ানো ও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা অবরোধের কারণে যাত্রীদের ভিড় বেশি বলে মনে করছেন অনেক যাত্রী। ডিসপ্লেতে ৯টা, ৯টা ১০ ও ৯টা ২০ মিনিটের ট্রেনের সময়সূচি দেখাচ্ছিল। লোকজন টিকিট সংগ্রহ করে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন।

বাদল সরকার নামের এক যাত্রী বলেন, এ সময়টায় অন্যদিনও ভিড় থাকে। তবে আজ মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন যাবে এবং অবরোধের কারণে যাত্রী কিছুটা বেশি। তিনি ৯টা ১০ মিনিটের ট্রেনে উঠে যান। তাঁর গন্তব্য ছিল মিরপুর ১১ নম্বর।

আজ প্রথমবারের মতো ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে যেতে পারা যাত্রীরা বললেন, স্থানভেদে যানজট ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে এক ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত লাগত। এখন তাঁরা সেসব গন্তব্যে যেতে পারছেন ১০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে। পথে সময় নষ্ট না হওয়ার বিষয়টি তাঁদের একধরনের প্রশান্তি দেয়।

দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন ৬-এর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ৪ নভেম্বর শনিবার প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন উদ্বোধন করেন। আজ সকাল সাড়ে ৭টা থেকে যাত্রীদের চলাচলের জন্য স্টেশনগুলো খুলে দেওয়া হয়।

‘এত শান্তি বলার মতো না!’

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ৯টা ২০ মিনিটের ট্রেনে চড়েন সাদিয়া আক্তার নামের এক নারী। তিনি বললেন, নরসিংদী থেকে আজ ট্রেনে টঙ্গী পর্যন্ত এসেছেন। সেখান থেকে দিয়াবাড়িতে এসেছেন। যাবেন মিরপুর ১১ নম্বরে। আজই প্রথম মেট্রোতে উঠেছেন।

মুঠোফোন হাতে নিয়ে বসেছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। সময় দেখছিলেন। তিনি মিরপুর ১২ নম্বরে পল্লবী স্টেশন থেকে উঠেছেন। আজ প্রথমবারের মতো যাচ্ছেন ফার্মগেটে তাঁর অফিসে। এই প্রতিবেদককে বললেন, তিনি এত দিন আগারগাঁও স্টেশনে নেমে গিয়ে আরেকটি বাস ধরে ফার্মগেট যেতেন। মেট্রোরেলের আগে তিনি বাসে পল্লবী থেকে ফার্মগেট যেতেন। সময় লাগত দেড় ঘণ্টা। আজ ওঠার সময় মুঠোফোনে দেখেছে ৯টা ২৭ মিনিট বাজে। নেমে যাওয়ার সময় বললেন, ১১ মিনিটে ফার্মগেট পৌঁছালাম।

আসন না পেয়ে কিছুটা পথ দাঁড়িয়ে ছিলেন তেজগাঁও কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী মৌসুমি আক্তার। ফার্মগেটে নামার আগে তিনি বলেন, ‘আজ প্রথম মেট্রোতে ফার্মগেট যাচ্ছি। অনেক সময় বেঁচে যাচ্ছে। আগে বাসের জন্য অপেক্ষা, ভিড়, যানজট ঠেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগে যেত।’

খান আবু খালিদ নামের একজন যাত্রী বলেন, তিনি একজন ঠিকাদার। উত্তরা থেকে আগারগাঁও যেতেন আগে আড়াই ঘণ্টায়। মেট্রোতে এখন যেতে পারেন ১৮ মিনিটে।
মতিঝিলে গন্তব্যের যাত্রী মেহেবুব মোর্শেদ ও খায়রুল ইসলাম উঠেছিলেন কাজীপাড়া স্টেশন থেকে। মতিঝিলের অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, তাঁর অফিসের স্টাফ বাস আছে। সেটায় সকাল আটটায় উঠতে হয়। আজ মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ায় একটু বেশি ঘুমানোর জন্য বাসে ওঠেননি। সকাল সাড়ে ৯টায় স্টেশনে এসেছেন। ৯টা ৩৩ মিনিটে ট্রেনে চড়েছেন। ২০ মিনিটে পৌঁছে যাবেন। তিনি বলেন, অফিসের বাসের জন্য তাঁদের মাসে ১৮০ টাকা ভাড়া কাটে। মেট্রোতে ৪০ টাকার মতো ভাড়া লেগেছে। ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তিনি কখনো মেট্রো, কখনো স্টাফ বাসে যাবেন।

আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে শুরুতে ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে মেট্রোরেল থামছে
আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে শুরুতে ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে মেট্রোরেল থামছেছবি: তানভীর আহাম্মেদ
মেহেবুব মোর্শেদ বলেন, তিনি বাইকে করে মতিঝিলে যেতেন। তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িও আছে। কিন্তু যানজটের কারণে গাড়ি নিয়ে অফিসে যান না। আজ মেট্রোতে চড়ে তাঁর খুব আরাম লাগছে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘ভাড়া বেশি লাগুক, এত আরাম, এত শান্তি বলার মতো না। গ্যাঞ্জাম নেই। পলিউশন (দূষণ) নেই। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, নগরবাসীকে মেট্রোরেল উপহার দেওয়ার জন্য।’

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here