১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস। বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয় এই দিনটিকে। আর এমন দিনে সুদূর ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাদেরকেই হারিয়ে দিনটি জয়ে রাঙালো টাইগাররা। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সেন্ট ভিনসেন্টে টসে হেরে আগে ব্যাটিং করে খুব একটা বড় সংগ্রহ পায়নি টাইগাররা। সৌম্য সরকারের ৩২ বলে ৪৩ রানের ওপর ভর করে স্বাগতিকদের ১৪৮ রানের লক্ষ্য দেয় সফরকারীরা। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত এক বল বাকি থাকতেই ১৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তাতেই ৭ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্টে সময়টা ১৫ ডিসেম্বরের শেষ প্রহর। হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশে ঘড়ির কাটায় এরই মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর। আজকের দিনে বাংলাদেশ পালন করছে বিজয়ের ৫৩ বছর। ১৬ই ডিসেম্বরের সকালে দেশের মানুষের উৎসবের উপলক্ষ্যটা আরেকটু চওড়া হলো বাংলাদেশের জয়ের সুবাদে।
শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১০ রান। ক্রিজে তখনও ছিলেন বিধ্বংসী ব্যাটার রোভম্যান পাওয়েল। রোমারিও শেফার্ডের সঙ্গে যার ৩৩ বলে ৬৭ রানের জুটি বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দিচ্ছিলেন প্রায়।
হাসান মাহমুদের শেষ ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য হলেন তিনি। সেখানেই মূলত জয়টা নিশ্চিত হয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য। এরপর এক বল বিরতি দিয়ে বোল্ড আলজারি জোসেফ। তাতেই নিশ্চিত দারুণ এক জয়।
ব্যাট হাতে ২৪ বলে ২৬ রান করা মেহেদি হাসান বল হাতেও ছড়ি ঘুরালেন। এক ওভারেই তুলে নিলেন দুই উইকেট। সপ্তম ওভারে বল করতে এসে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিকদের একেবারে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলেন মেহেদি। ৩৮ রানেই ৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইনিংসের প্রথম ওভারটি করেছেন হাসান মাহমুদ, দিয়েছেন মাত্র ১ রান। পরের ওভার করতে এসে প্রথম বলেই উইকেট নিলেন তাসকিন আহমেদ। লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন ব্র্যান্ডন কিং। তবে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল গেছে অফ সাইডে, মিড অফে বাঁ পাশে সরে ক্যাচ নিয়েছেন তানজিদ হাসান।
তৃতীয় ওভারে মেহেদির বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন নিকোলাস পুরান। লেন্থ ছিল বিপক্ষে, মিস করলেন। লিটন বল গ্লাভসে নিয়ে স্টাম্পস ভাঙতে সময় নেননি। ২ রানে ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চতুর্থ ওভারে তানজিম হাসানকে ২টি ছক্কা আর ১টি চার মেরেছেন জনসন চার্লস। পরের ওভারে চার মেরেছেন মেহেদী হাসানকেও। তবে ডানহাতি এ অফ স্পিনারকে আরেকটি বাউন্ডারি মারতে গিয়ে মিড অফে হাসান মাহমুদের ক্যাচে পরিণত হন চার্লস। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ২০ রান।
সপ্তম ওভারে বল করতে এসে তুলে নিলেন দুই উইকেট। আন্দ্রে ফ্লেচারকে লিটনের ক্যাচ বানান এই ডানহাতি স্পিনার। রানের খাতা খোলার আগেই তাকে ফিরতে হয় সাজঘরে। ওভারের ৫ম বলে রস্টন চেজকেও সাজঘরে ফেরান মেহেদি।
গুডাকেশ মোতিও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১০ বলে ৬ রান করে তানজিম হাসান তামিমের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। এরপরেই আকিল হোসেনকে ফেরান রিশাদ হোসেন।
অষ্টম উইকেট জুটিতে শেফার্ড ও পাওয়েল মিলে করেন ৬৭ রান। ১৭ বলে ২২ রান করা শেফার্ডকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। পুল শট খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে রিশাদের হাতে ধরা পড়েন এই ব্যাটার। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন রোভমান পাওয়েল। ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে তাকে ফেরান হাসান মাহমুদ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাওয়েল। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ৬০ রান।
টাইগারদের হয়ে মেহেদি হাসান একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট। হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেন নেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন তানজিম হাসান সাকিব ও রিশাদ হোসেন।
আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা একেবারেই মন্দ ছিল না বাংলাদেশের। তবে স্কোরবোর্ডে ১৫ রান জমা হতেই তানজিদ হাসান তামিম লিটনকে হারায় তারা। ১১ বলে ৬ রান করে অকিল হোসেনের বলে বোল্ড আউট হয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি। অধিনায়ক লিটন আউট হন গোল্ডেন ডাক মেরে।
আফিফ হোসেন ধ্রুব তার ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১১ বলে ৮ রান করে রস্টন চেজের বলে অকিল হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর সৌম্য সরকার ও জাকের আলি অনিকের জুটি থেকে আসে ৪২ বলে ৫৭ রান। দলীয় ৮৭ রানে জাকের ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি। এরপর সৌম্য সরকারও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ৩২ বলে ৪৩ রান করা এই বাঁহাতিকে ফেরান ম্যাকময়।
১৫ ওভার শেষে রান ছিল ৯৫। বাংলাদেশের স্কোর সেখান থেকে ১৪০ পেরুবে এমন বাজি ধরার লোক খুব কমই ছিল। সেখান থেকে ১ বছর পর জাতীয় দলে শামীম পাটোয়ারী খেললেন ১৩ বলে ২৭ রানের ইনিংস।
শামীমকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মেহেদি হাসান। দুজনে মিলে বাংলাদেশের স্কোর ১৪০ পার করতে সাহায্য করেছেন। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে আউট হন শামীম। শেষ বল থেকে রিশাদ হোসেন নেন দুই রান। আর তাতেই নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানের পুঁজি পায় টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ম্যাকময় ও অকিল হোসেন নেন দুটি করে উইকেট। রস্টন চেজ ও শেফার্ড শিকার করেন একটি করে উইকেট।