বিশ্বকাপে কার কাঁধে বাংলাদেশ

0
153

এমএস ধোনিকে সরিয়ে বিরাট কোহলিকে কিংবা কোহলিকে সরিয়ে রোহিত শর্মাকে অধিনায়ক করা নিয়ে ভারতে কম তোলপাড় হয়নি। নেতৃত্ব কে না পেতে চান। দলের নেতা হওয়ার প্রত্যাশা থাকে সবারই। তবে অনেক দেশে অধিনায়ক হওয়া নিয়ে তুমুল লড়াই হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন।

বাংলাদেশে বরং চাপের ভারে নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চান প্রায় সবাই। তামিম ইকবাল তো চাপ নিতে না পেরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ফিরলেও এবার চোট সমস্যা সামনে এনে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তামিম। আসন্ন এশিয়া কাপ ও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কে নেতৃত্ব দেবেন সেটাই এখন আলোচনায়। বিসিবি পরিচালকদের বড় অংশ এবং সাবেকরা নতুন

ওয়ানডে অধিনায়ক হিসাবে দেখতে চান সাকিব আল হাসানকে।

তামিম ছিলেন বাংলাদেশের ১৪তম ওয়ানডে অধিনায়ক। তার অনুপস্থিতিতে পাঁচ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া লিটন দাস ১৫তম ওয়ানডে অধিনায়ক। নেতৃত্ব অনেকের কাছেই বোঝা। পারফরম্যান্সের সঙ্গে দল পরিচালনা ও টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হওয়ার পাশাপাশি সব কিছু সামলানোর। চাপ নিতে না পেরে যেমন ২০১৪ সালে সরে দাঁড়ান মুশফিকুর রহিম। সাকিবও বহুবার চাপের কারণে মিডিয়ার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।

হাবিবুল বাশারের মতো ঠান্ডা মাথার অধিনায়কও চাপে ভেঙে পড়েছিলেন। তবে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে অধিনায়ক হওয়ার স্বপ্ন থাকে সবারই। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হাতে দুটি বিকল্প আছে। সাকিব ও লিটন দাস। অভিজ্ঞতা, ধারে ও ভারে অনেক এগিয়ে সাকিব। কোচিং স্টাফও চায় এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার টেস্ট ও টি ২০র মতো ওয়ানডেতেও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিক। ২০১১ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সেবার মাশরাফি মুর্তজার ইনজুরির কারণে দায়িত্ব পড়েছিল সাকিবের কাঁধে। একমাত্র ক্রিকেটার হিসাবে ২০১৫ এবং ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ দুটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের খেলা ১৯৯৯ সালের প্রথম বিশ্বকাপে অধিনায়ক ছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ২০০৩ সালে ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট এবং ২০০৭ সালে হাবিবুল বাশার।

সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান মনে করছেন লিটন দাসের ব্যাটিং বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেতৃত্বের ভারে ব্যাটার লিটনকে হারাতে চান না রকিবুল। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের নেতৃত্ব নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হয়েছে। সহঅধিনায়ক ধরলে লিটন অটোচয়েজ হওয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু তামিম সরে গেছে এবং লিটন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটারদের একজন। তার সামনে অনেক সময় পরে আছে। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে আমরা কিন্তু ফেভারিট না তবে স্বপ্ন দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘লিটনের ব্যাটিং দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেতৃত্ব নিয়ে চাপটা যদি তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে সেটা তার ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। দলের জন্য যা ভালো হবে না। ফর্মে থাকা লিটনকে কোনোভাবেই হারাতে চাই না। হয়তো তার ব্যাটিংই বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলে দিতে পারে। এই আপৎকালীন সাকিবই সেরা পছন্দ হতে পারে।’

সাকিবকে নিয়ে রকিবুল বলেন, ‘সাকিব বাংলাদেশের বড় তারকা। তার আÍবিশ্বাস দারুণ। অসাধারণ ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব, একই সঙ্গে পারফরমার। কঠিন পরিস্থিতি, চাপের মুহূর্তে সাহসের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সব সময় যে সেই সিদ্ধান্তে কাজ হবে এমনটা নয়। তবে তার অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা এবং ড্রেসিংরুম সুন্দর রাখার জন্য সাকিবকে দরকার। নরম তামিমকে পেয়ে হয়তো কোচও একটু বেশি প্রভাব দেখাতেন। সাকিব কিন্তু সব কিছু মেনে নিতে চাইবে না। তাতে সব দিক ভালো থাকবে।’

ভারতের মাটিতে এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক আশাবাদী বাংলাদেশ। তামিম না থাকলে বিশ্বকাপের নেতৃত্ব নিয়ে ২০০৩ বিশ্বকাপের অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট কদিন আগে বলেন, ‘আমার ধারণা ৯০ ভাগই বলবেন সাকিব আল হাসান। সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষেও টি ২০তে ৫০-৫০ সম্ভাবনার ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছে সাকিব। তার নেতৃত্ব দারুণ। তাকে সবাই পছন্দ করে, ড্রেসিংরুম ঠিক রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলা, ড্রেসিংরুম ঠিক রাখা সব মিলিয়ে সাকিব একটা ব্র্যান্ড।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির এক পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন আমরা কারও নাম বললে সমস্যা হতে পারে। তবে সবাই তো চায় অভিজ্ঞ সাকিবই বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিক। সে নেতৃত্ব নিতে কতটা আগ্রহী সেটাও দেখার বিষয়। তবে সবার কথা ভেবে তারই এগিয়ে আসা উচিত। বিসিবি প্রস্তাব দিলে সেটা গ্রহণ করা দরকার। কোনো কারণে সাকিব যদি এশিয়া কাপে দায়িত্ব নিতে না চান সেক্ষেত্রে লিটন দাস তো আছেই। তবে লিটনের কাছ থেকে তার ব্যাটিংটা কিন্তু আগে দরকার।’

এদিকে কিছুটা ব্যতিক্রমী মত দিলেন আরেক সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা। তিনি বলেন, ‘সাকিবের খেলায় মন দেওয়া উচিত। তার সেরাটা পেলে দলও এগিয়ে যাবে। তাকে ফ্রি করে দেওয়া যেতে পারে। লিটন কয়েকটা ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাকে বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসাবে ধরে রাখলে বিশ্বকাপে সমস্যা হবে না।’

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here