ত্বক উজ্জ্বল করতে কিংবা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সবসময় নজর দিই খাদ্য তালিকায়। কিন্তু আমারা কি কখনো সুস্থ লিভার নিয়ে চিন্তা করি? সম্ভবত না, কিন্তু এখন আমাদের শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সম্পর্কে চিন্তা করার সময় এসেছে। ভালো পুষ্টি আপনার লিভারের কার্যকারিতা স্বাভাবিক এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
লিভার কী করে?
লিভার বা যকৃত আমাদের শরীরের পাওয়ার হাউস এবং প্রধান ফিল্টার। আপনি যখন খাবার খান, তখন তা লিভার দ্বারা উৎপাদিত বিভিন্ন এনজাইম, প্রোটিন এবং পিত্ত দ্বারা পাকস্থলী এবং অন্ত্রে ভেঙে যায়। এটি ভিটামিন, খনিজ এবং কার্বোহাইড্রেটের ভান্ডার হিসেবেও সঞ্চালিত হয়। লিভারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে: রোগ-প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করে, হরমোন যেমন অ্যাড্রেনালিন রিসাইকেল করে লিভার। এ ছাড়া শরীরের অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং আয়রন ও কপার জমা করে রাখার কাজ করে লিভার। বড় অরগান, বেশি কাজ, তাই চাহিদাও বেশি। দুই দিক থেকে রক্ত সরবরাহ করতে হয় লিভারের জন্য।
কীভাবে লিভার সুস্থ রাখবেন?
স্বাস্থ্যকর লিভার ফাংশন করার জন্য অনেকগুলো বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে: স্বাস্থ্যকর এবং জৈব খাবার খাওয়া, প্রচুর পানি পান করা, অ্যালকোহল এবং লিভার-বিষাক্ত ওষুধ এড়িয়ে চলা, অল্প পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া, নিয়মিত লিভার ডিটক্স করুন।
লিভারের জন্য উপকারী খাবারগুলো
লিভার আপনার শরীরের একমাত্র অঙ্গ যা নিজেকে পরিষ্কার করে। আমরা যা খাই বা পান করি তা আমাদের লিভার দ্বারা ডিটক্সিফাই করে তাই আপনার লিভারকে ফিট রাখতে একটি সুষম, লিভার-বান্ধব খাদ্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন জেনে নিই লিভারকে প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এমন খাবারগুলো সম্পর্কে-
আভোকাডো
আভাকাডো আধুনিক বিশ্বের সুপারফুড বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল রয়েছে; যা লিভারের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এতে গ্লুটাথিয়ন নামে পরিচিত একটি অনন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন ফিল্টার করতে সাহায্য করে।
রসুন
রসুনে একটি নির্দিষ্ট সালফার যৌগ রয়েছে, যা লিভারের এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। এতে সেলেনিয়ামও থাকে যা লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
রসুনে থাকা সালফার যৌগ যা লিভারের এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে।
সবুজ শাকসবজি
সবুজ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সবসময় ভালো। সবুজ শাকসবজি যেমন পালংশাক, ভিটামিন এ, সি, কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
সবুজ শাকসবজি যেমন পালংশাক, ভিটামিন এ, সি, কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা রক্তকে বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
হলুদ
হলুদ হলো সবচেয়ে শক্তিশালী মশলা যা লিভারের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং সুস্থ লিভার কোষ পুনরুজ্জীবিত করে একটি সুস্থ লিভার বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি পিত্তের প্রাকৃতিক উৎপাদনও বাড়ায়। হলুদও লিভারে চর্বি জমা হওয়া রোধ করে, একটি সমস্যা যা ফ্যাটি লিভার, লিভারের সিরোসিসের মতো অবস্থার কারণ হতে পারে।
বিটরুট
বিটরুটের রসে নাইট্রেট থাকে এবং এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা হৃদরোগ এবং প্রদাহ কমাতে পারে। ক্লিনিকাল ডেটা আরও পরামর্শ দেয় যে বিটে পাওয়া একটি রাসায়নিক ফ্যাটি লিভার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে।
বিটরুটের রসে নাইট্রেট থাকে এবং এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা হৃদরোগ এবং প্রদাহ কমাতে পারে।
অলিভ অয়েল
খাবারে নিয়মিত অলিভ অয়েল রাখলে মিলবে অনেক উপকার। এই তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটির নির্যাস লিভারের রোগে উপকারী। অলিভ অয়েলে ক্ষতিকর ফ্যাট নেই। তাই প্রতিদিন পরিমিত অলিভ অয়েল খেলে তা আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে কাজ করবে।
আখরোট
সাধারণভাবে, বাদামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, চর্বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় উপকারী। আখরোট হলো একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস যা আর্জিনাইন নামে পরিচিত যা লিভার পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। আখরোটে বিশেষ করে উচ্চ মাত্রার উদ্ভিদ যৌগ থাকে। কালো আখরোট লিভারে রক্ত অক্সিজেন দিতে সাহায্য করে।
চর্বিযুক্ত মাছ
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ লিভারের জন্য উপকারী। এই ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের নানা রকম প্রদাহের থেকে দূরে রাখে। সেইসঙ্গে ঠিক রাখে উৎসেচকের ক্ষরণও। খাবারের তালিকায় স্যামন ফিশ রাখলে এক্ষেত্রে উপকার পাবেন। এ ছাড়াও রাখতে পারেন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত অন্যান্য মাছও।
আপেল
ডায়েটে আপেলের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ ফল যোগ করা আপনার শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এটি পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্যকর সহায়তাও প্রদান করে।
লেবু
বলা হয়ে থাকে এক গ্লাস গরম পানিতে লেবুর রস লিভার ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। আয়ুর্বেদিক সাহিত্য অনুসারে, পিপ্পালি একটি শক্তিশালী ঔষধি গাছ হতে পারে, যার হেপাটোপ্রোটেকটিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং বিভিন্ন লিভারের রোগ পরিচালনায় কার্যকর হতে পারে।
ওটস
যেসব খাবার ভালো হজমে সাহায্য করে তার মধ্যে অন্যতম হলো ওটস। ওটসে থাকে প্রচুর ফাইবার। যেসব খাবার হজম ভালো করে সেগুলো লিভারের জন্যও ভালো। এ ছাড়াও ওটসের থাকা বিটা গ্লুক্যানস লিভারকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। যাদের ডায়াবেটিস ও স্থুলতার মতো সমস্যা রয়েছে তারাও নিয়মিত ওটস খেতে পারেন। কারণ এই দুই অসুখের বিরুদ্ধেও লড়াই করে ওটস।
গ্রিন টি
গ্রিন টি ক্যাটেচিন নামে পরিচিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ। ক্যাটেচিন লিভার ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে এবং লিভারের প্রদাহ কমায়।
কফি
কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে অনেকেরই। পরিমিত কফি খেতে পারলে তা লিভারের সমস্যা থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে। সেক্ষেত্রে কফি খেতে হবে দুধ ও চিনি ছাড়া।
২০১৩ সালে আমেরিকায় একটি জরিপে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষে প্রতিদিন কালো কফি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তাদের ভেতরে কারও লিভারের কোনো সমস্যা হয়নি। সেইসঙ্গে কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভার ক্যানসারের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয়।