সুবর্ণচরের পারুল ধর্ষণ আর অপারেশন টর্চলাইটঃ আগামী নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ হবে সরকারী দল

0
588

মোহাম্মদ সহিদ উল্যাহ বাচ্চু।।

১ জুলাই, ২০২২ ইং রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তির পায়ু পথে টর্চলাইট ঢুকিয়ে দেয় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীচক্র। মুমূর্ষু ব্যক্তিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে অপারেশন করেই চিকিৎসকরা বাঁচাতে সক্ষম হন বলে জানা যায়।

টর্চলাইটঃ
অন্ধকারে পথচলা বা অন্ধকার স্থানকে আলোকিত করতে বিশেষ বাতি। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতে একে টর্চলাইট বলে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতে ফ্ল্যাশলাইট বলে।
১৮৯৯ ইং সালে আবিস্কৃত এ যন্ত্রটিকে ১২৪ বছর পর অপব্যবহার করল সুবর্ণচরের কতিপয় কুলাঙ্গার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা। টর্চলাইটের তিনটি অংশ থাকে,,, (১) বাল্ব (২) ব্যাটারী (৩) সুইচ

ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং এক্সরে রিপোর্টে দেখা যায়, বৃদ্ধ ব্যক্তির পায়ুপথে লম্বা টর্চলাইটটি সম্পুর্ন অংশ মানে বাল্ব, ব্যাটারী আর সুইচ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।

পায়ুপথ প্রসঙ্গঃ
মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রের বৃহদান্ত্রের শেষাংশের নাম মলাশয় বা পায়ুপথ। মানুষের বর্জ্য পদার্থ যা আর দেহে শোষিত হতে পারে না, তাকে মল বলে। পরিপাকতন্ত্রে মল নিষ্কাশন বা ত্যাগে এ পায়ুপথের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃহদান্ত্রের ও তিনটি অংশ- (১) সিকাম (২) কোলন (৩) মলাশয়। টর্চলাইটটি শুধুমাত্র মলাশয় বা পায়ুপথে ঢুকাতে সক্ষম হল কুলাঙ্গাররা। কোলন ও সিকাম অতিক্রম করতে পারেনি।

সুবর্ণচরের এ অপ্রত্যাচিত ও চরম ঘৃনিত ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছে। সুবর্ণচরের নাগরিকরা আজ ঘৃনিত বা উপহাস বিদ্রুপের শিকার হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটের রাতে প্রতিপক্ষের একজন সমর্থক/ভোটারকে ধর্ষণ ও ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বৃদ্ধের পায়ুপথে টর্চলাইট ঢুকানোর খেসারত সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে দিতেই হবে। কেননা টর্চলাইট মামলার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ দলের কর্মী, নেতা বা জনপ্রতিনিধি সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, মিছিল, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে জানা যায়। অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গর্হিত কাজটির জন্য কোন অনুশোচনা না করে বা ভিকটিমের পরিবারকে সমবেদনা জ্ঞাপন না করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে, যা অগ্রহনযোগ্য ও দলটির জন্য অস্বস্তিকর।দলের ভাবমূর্তি ও ক্ষুন্ন হচ্ছে।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সাবেক সভাপতি ও নোয়াখালীর অবিসংবাদিত নেতা মরহুম আবদুল মালেক উকিল এর অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতে সদর উপকূলীয় চরাঞ্চলে আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হল। মরহুম আবদুল মালেক উকিল এর অবর্তমানে এ অঞ্চলে একটি স্বার্থান্বেষী ও দলীয় প্রতারকদের আবির্ভাব হওয়ায় এ অঞ্চলে মালেক উকিল পুত্র গোলাম মহিউদ্দিন লাতু ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হল। অবশেষে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ২০০৮ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দানবীর হাজী ইদ্রিসপুত্র একরামুল করিম চৌধুরীকে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে দলীয় প্রতারকদের চপেটাঘাত করে নোয়াখালী-৪ আসনটি পুনরুদ্ধার করে।

২০০৫ সালে সৃজিত উপজেলাটিতে অসংখ্য স্বয়ংক্রিয় উন্নয়নমুলক কাজ দৃশ্যমান হলেও চরজব্বার ও চরওয়াপদাতে তুলনামুলক কাজ হয়নি বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আগামী নির্বাচনে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী, কর্মী আর সমর্থকদের হাতে “সুবর্ণচরের অপারেশন টর্চলাইট” নামে একটি বিশেষ পলিটিক্যাল অস্ত্র তুলে দিল সুবর্ণচরের এ মহলটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এ ঘটনার তদন্ত ও সঠিক বিচার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না দেয়া হলে চরম জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে সরকারি দলের।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে “সুবর্ণচরের পারুল ধর্ষণ” আর ” সুবর্ণচরের অপারেশন টর্চলাইট” এর বর্বরোচিত ও গর্হিত অপকর্ম দুটির জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে সারাদেশে। সুবর্ণচরের “এ টর্চলাইট”টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের অন্ধকার পথকে আলোকিত করতে বিশেষ ভুমিকা রাখবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন। যাইহোক,, এখনই সময় এ ঘটনার সাথে জড়িত ও নির্দেশদাতা বা পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নতুবা চরম খেসারত দিতে হবে। সাধু সাবধান।

লেখক: মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ (বাচ্চু), চরজুবিলী, সুবর্ণচর, নোয়াখালী

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here