সুবর্ণচরে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে কৃষকের ভাগ্যবদল

0
408

ইব্রাহিম খলিল শিমুলঃ নোয়াখালী সুবর্ণচরে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ভাগ্যবদল করছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রবি মৌসুমের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি লক্ষণীয়।

উপজেলার পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চর মজিদ ও চরবাটা ইউনিয়নের পশ্চিম চরবাটা গ্রামে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শুধু মাত্র বাঁশ ও নেটের সাহায্যে উঁচু চাউনি দিয়ে ইয়োলো ড্রাগন ও ব্লাক সুগার এ দুই জাতের তরমুজ চাষাবাদ করছেন তারা। অল্প পুঁজি ও অল্প সময়ে লাভ বেশি হওয়াতে খুশি তারা।

কৃষকরা জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে উৎসাহ দিয়ে বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষাবাদ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এবং কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও নগদ অর্থসহ সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করায় ব্যাপক লাভবানের স্বপ্ন দেখছি।

তারা আরও জানান, পরিবেশ ভালো থাকায় রবি মৌসুমের চেয়ে কম খরচে বেশি লাভজনক হওয়ার কারন এতে পানি সরবরাহ কম লাগে। পোঁকামাকড়ের আক্রমণ তেমন থাকে না। তবে কিছু মাছি পোকা আক্রমণ করে তা সেক্সপেরামন পাদ (প্লাস্টিক বক্স) এর সাহায্যে দমন করা সম্ভব হয়ে থাকে। এছাড়াও যে কোনো পরামর্শের জন্য প্রতিনিয়ত কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরে সুবর্ণচরে ৬ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ হয়। যা গত বছরের চেয়ে দিগুণ। এছাড়াও অন্যান্য কৃষকদের নিজ উদ্যোগের চাষাবাদসহ সবেমিলে উপজেলায় প্রায় ১০ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ করেছে চাষীরা।

পশ্চিম চরবাটা গ্রামের কৃষক শ্রীবাস চন্দ্র দাস জানান, উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ স্যারের পরামর্শে খাল পাড়ের পরিত্যক্ত ৫০ শতক জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করি। এতে ব্যয় হয়েছে ৪০-৪৫ হাজার টাকা। যার বাজার মূল্যে তরমুজ বিক্রি হবে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।

শ্রীবাস আরও জানান, এ মৌসুমে হাতে গণা কয়েকজন কৃষক ছাড়া ব্যাপক পরিসরে কেউ তরমুজ চাষবাদ করে না। তাই বাজারে তরমুজের দামও একটু বাড়তি থাকে। সর্বোচ্চ তরমুজের ওজন ২-৩ কেজি হয়। যার প্রতিটি বাজার মূল্য ২০০-২৫০ টাকা বিক্রি হয়।

দক্ষিণ চর মজিদ গ্রামের কৃষক মো. ফারুক জানান, গত বছর পার্শ্ববর্তী সিরাজ ৫০ শতক জায়গায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছে। তার দেখাদেখি এ বছর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন স্যারের পরামর্শে আমিও ৫০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করি। যা এপর্যন্ত ব্যয় হয় ২০-২৫ হাজার টাকা এবং বাজার মূল্যে বিক্রি হবে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া হানিফ নামের আরেকজন কৃষক সেও ১ একর জমিতে ৩৫-৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে তরমুজ চাষ করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুন অর রশিদ জানান, বাঁশ ও নেটের সাহায্যে চাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের দৃষ্টি নন্দন চাষ করছেন চাষীরা। এতে আগামীতে চাষাবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন পার্শ্ববর্তী অনেক কৃষকরা। এখানকার তরমুজ চাষিরা বর্তমান সময়ে ভালো দাম পেয়ে খুশি। এ উৎপাদিত গ্রীষ্মকালীন তরমুজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলা শহরে পাইকারি বিক্রি করবে। এবং আগামীতে এ গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষাবাদ বাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ অন্যান শহরে বাজারজাত করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here