চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য পুলিশ দাবি

0
18

দেশের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য পুলিশের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, সব জায়গায় পুলিশ আছে। শিল্প পুলিশ, মেট্রো পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ইত্যাদি। ডাক্তারদের জন্যও থাকতে হবে। এমন আইন করতে

হবে, ডাক্তারের গায়ে হাত দিলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হবে। চিকিৎসকদের কোনো সুরক্ষা নেই, চিকিৎসকদের মারলে মানুষ খুশি হয়। অথচ অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি সেবা দেয় চিকিৎসকরা। অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করতে পারে চিকিৎসকরাই, অন্য কেউ পারে না।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে চিকিৎসকদের অন্যতম জাতীয় সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের চিকিৎসক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক নির্বাচিত জিএস ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, দেশের চিকিৎসাসেবায় রেফারেল সিস্টেম চালু হওয়া উচিত। এটি চালু হলে চিকিৎসকরা উপকৃত হবেন। পেশার মানও বাড়বে। সমতা নিশ্চিত হবে।

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা দেশের নিবেদিত প্রাণ হয়ে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভাতা ৫০ হাজার টাকা করা উচিত বলে মনে করেন জামায়াত নেতা ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, উচ্চতর শিক্ষায় প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের যে ভাতা দেওয়া হয়, সেটি বর্তমান যুগের বিবেচনায় কম। প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের পরিবার-পরিজন আছে, তাদের চালাতে হয়। এই ভাতা দিয়ে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের চলতে কষ্ট হচ্ছে। উচ্চতর শিক্ষায় ভাতা আরও বাড়াতে হবে। এই ভাতার পরিমাণ অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের সুরক্ষায় আইন থাকতে হবে। এটির ওপর জোর দিতে হবে।

চিকিৎসকদের নীতির ওপর অবিচল থাকার উপদেশ দিয়ে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, মানুষ যখন জানবে এই চিকিৎসক জামায়াত করে, তখন মানুষ বুঝে নিবে এই চিকিৎসক ইথিক্যাল প্র্যাক্টিস করে। কখনো অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয় না। এই চিকিৎসক রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। নীতি নৈতিকতার ওপর অবিচল থাকে। রোগী থাক আর না থাক নৈতিকতা বিসর্জন দেয় না।

চিকিৎসকদের সামাজিক ও সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের টার্গেট শুধু হাসিনার পতন নয়, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা। নতুন এই বাংলাদেশ গড়ে তোলায় এনডিএফকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। চিকিৎসক জাতিকে নিয়েই এই কাজ করতে হবে।

চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিয়ে বিশেষ অতিথির আরেক বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গত দিনগুলোতে যারাই দুঃশাসনের পদলেহন করেছে, যোগ্যতা-দক্ষতা না থাকলেও তারাই প্রমোশন পেয়েছে, স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে জেঁকে বসেছে। আর ভালো চিকিৎসকরা গত ২০ বছরে মেডিকেল অফিসার থেকে সহকারী অধ্যাপকও হতে পারেননি।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, চিকিৎসক সমাজ যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামেই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। গত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও এনডিএফের চিকিৎসকরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। আমাদের চিকিৎসকরা একইসঙ্গে মাঠেও লড়েছেন, আবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে হাসপাতালেও চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্ত হওয়া ও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কারণে তাদেরকে বদলি করা হয় এবং ভয়ভীতি দেখানো হয়। এরপরও এনডিএফের চিকিৎসকরা পিছ পা হয়নি।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের সময়ে চিকিৎসকরা বরাবরই অবহেলিত ছিল। শুধু বিএনপি-জামায়াতপন্থি হওয়ার কারণে অসংখ্য চিকিৎসককে গত ১৫-২০ বছরেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। একজন মেডিকেল অফিসার ২০ বছরেও সহকারী অধ্যাপক হতে পারেননি, এর চেয়ে বৈষম্য আর কি হতে পারে?

এক্ষেত্রে যেহেতু ছাত্র-জনতা একটি নতুন স্বাধীনতা এনেছে, আমরা আশা করব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানেই যেন গত সরকারের বঞ্চনার শিকার হওয়াদের অবিলম্বে পদোন্নতি দিতে হবে। এক্ষেত্রে এনডিএফকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, চিকিৎসক সোসাইটিকে পরিবর্তনে এনডিএফের চিকিৎসকদের অনেক কিছু করার আছে। আপনারা সাধারণ চিকিৎসকদের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করবেন এবং সমাধানের চেষ্টা করবেন। তবে আমাদেরকে সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা ডাক্তার হই আর শ্রমিক হই, দিনশেষে আল্লাহর বান্দা। আমাদের সব কর্মকাণ্ডের জন্যই আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মেডিকেল সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ডা. আতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে এবং মহানগরী দক্ষিণের মেডিকেল বিভাগের সহকারি সেক্রেটারি ডা. মারুফ শাহরিয়ারের সঞ্চলনায় এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সেন্ট্রাল এনডিএফ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, এনডিএফ সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন; মহানগর দক্ষিণের মেডিকেল বিভাগের সভাপতি ডা. তোফাজ্জল হোসেন; মহানগর উত্তর মেডিকেল বিভাগের সভাপতি ডা আসাদুজ্জামান কাবুলসহ আরও দেশবরেণ্য চিকিৎসকরা।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here