জনতা ব্যাংকের অনিয়ম অনুসন্ধানে নামছে দুদক

0
87

নিয়ম আর নীতি ভঙ্গ করেই চলছে জনতা ব্যাংক। এবার এর অব্যবস্থাপনা তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাটে সহায়তা করেছেন ব্যাংকটির অনেক কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে সব ধরনের অনিয়ম অনুসন্ধানে কোনো কর্মকর্তা বাদ যাবে না বলে জানিয়েছে দুদক।

কাগজে-কলমে নানা নিয়ম-নীতি, বাস্তবে সব ভিন্ন! এমন ধাপ্পাবাজিতেই চলছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। এক সময় ভালো ব্যাংক হিসেবে এর সুনাম ছিল। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, ততই দুর্নীতির আখড়া হয়ে ওঠেছে এটি।ঋণদানে নানা অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণ, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ ছাড়করণে ব্যাংকটির অসাধু কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য সবসময়। ফলে নেতিবাচক একটা প্রভাব পড়েছে ঋণ পরিশোধ ও দৃশ্যমান বিনিয়োগে।

তথ্য বলছে, দেশের খেলাপি ঋণে জর্জরিত শীর্ষ ব্যাংকের একটি জনতা ব্যাংক। ২০২৩ সালের মার্চে এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা; জুনে তা বেড়ে হয় ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এ খেলাপির পরিমাণ ছিল ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৩০.৪৩ শতাংশ। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে কৌশলে পুনঃতফসিল করে খেলাপি কমায় এক ধাপে ১৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এর আবার বড় অংশই অনিয়মের মাধ্যমে দেয়া বলে জানা গেছে।

বিরাজমান এ অবস্থা এবার বিশেষভাবে অনুসন্ধান করবে দুদক। ২০১২ সালে জনতা ব্যাংকের ঋণ ছাড়ের অনিয়মের অভিযোগ এনে জনস্বার্থে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি দুদককে এ আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। রিটকারী প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) অভিযোগ, ঋণ অনিয়মের যোগসাজশে ব্যাংকটির সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন।

এইচআরপিবি সিনিয়র আইনজীবী ও সভাপতি মুনজিল মোরশেদ বলেন,
রিটে আমরা একাধিক পত্রিকার প্রতিবেদন সংযোগ করেছি। সেখানে দেখানো হয়েছে যে, জনতা ব্যাংক থেকে অনেক অফিসার ঋণ নিয়ে ঘুষ ও দুর্নীতি করছেন। তারা অনেক ঋণ দিয়েছেন যেখানে কোনো ইক্যুইটি রাখা হয়নি। অর্থাৎ, ঋণ নিলে জমি বা অন্যকিছু যে ডিপোজিট রাখতে হয়, তা না রেখেই ঋণ দেয়া হয়েছে। ফলে এখন ঋণ নেয়া ওই ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস ছালাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ব্যাংকটিতে অধঃপতনের গতি কয়েকগুণ বেড়েছে। তার স্বেচ্ছাচারিতায় অন্যতম সহযোগী ছিলেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আব্দুল জব্বার। তদন্তকারী সংস্থা দুদক বলছে, আদালতের কমিশন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে তদন্ত। জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের।

দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, কমিশন হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদালত যেভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছে অবশ্যই সেভাবে অনুসন্ধান করবে। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ কীভাবে দেয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। দুদকের তো ব্যাপক ক্ষমতা। অনুসন্ধানকালে তা ব্যবহার করা হবে। ওই সময়ে ওই আমলে ব্যাংকে কারা কারা ছিল তাদের ঠিকানা জোগাড় করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে দুদক। বর্তমান ম্যানেজমেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। অথবা যারা ঘুষ দিয়ে ঋণ নিয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। দুদকের অনুসন্ধানে আইনের পরিধি অনেক ব্যাপক।

ব্যাংকিং খাতের এসব তিক্ত অব্যবস্থাপনা বন্ধে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা ও প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রভাবের বাইরে গিয়ে সংস্কারের কথা বলছেন প্রবীণ ব্যাংকাররা। এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন,

এখানে যারা ডিরেক্টর হয়ে এসেছেন তারা যোগ্যতাসম্পন্ন নন। তারা পরীক্ষায় পাস করা ‍ডিরেক্টর নন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক মতাদর্শের ডিরেক্টররা এসে স্বভাবগতভাবেই তাদের লোকজনকে ঋণ দিতে বলবেন বা তাদের লোকজনকে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বলবেন – এমনটাই হয় সাধারণত।

তিনি আরও বলেন, তবে সেখানে ম্যানেজমেন্টের ভেরিফিকেশন করা উচিত। পাশাপাশি কেবল কাগজে-কলমে নয়, ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশনও করতে হবে। মুখের কথায় ঋণ দিয়ে দিলে হবে না। প্রথমেই বাস্তবিক ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঋণ দেয়ার আগে অনেক ধরনের অ্যাসেসমেন্ট করতে হয়, তা যথাযথভাবে করতে হবে। এর মধ্যে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট যাচাইয়ের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দুর্ভাগ্যবশতভাবে অনেকেই ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট দেন না।

প্রসঙ্গত, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা রিটের বিবাদী হিসেবে রয়েছেন অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ও দুদক চেয়ারম্যানসহ ৮ জন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে অনুসন্ধান রিপোর্ট দাখিল ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here