তেজগাঁওয়ে ট্রেনে নাশকতা: আগুন দিয়েই নেমে যান দুজন

0
111

রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে হরতাল সমর্থকদের দেয়া আগুনে মা-ছেলেসহ চারজন পুড়ে মারা গেছেন। দুই ব্যক্তি ট্রেনটিতে আগুন দিয়ে নেমে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে এ আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া ৪টি মৃতদেহ সকাল ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন: নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার ছেলে ইয়াসিন (৩)। এছাড়া বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ বছর।

নিহত ইয়াসিনের মামা হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, তাদের বাড়ি নেত্রকোনার সদর উপজেলার বরুনা গ্রামে। ৩ ডিসেম্বর তারা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। ঢাকায় ফিরতে রাত ১২টার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে রওনা দিয়েছিলেন। ভোরে তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। সাথে ছিলেন ইয়াসিনের বড় ভাই ফাহিম (৮) ও তাদের মা নাদিরা।

হরতাল সমর্থকরা তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সেপ্রেসের বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবি: সময় সংবাদ

তিনি জানান, বিমানবন্দর স্টেশনে এসে ট্রেনটি থামলে তখন কিছু যাত্রী সেখান থেকে নেমে যায়। এ সময় তাদের পেছনের সিটে থাকা দুই ব্যক্তিও নেমে যায়। এরপর ট্রেনটা চলতে শুরু করা মাত্রই পেছনের সিট থেকে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তেই আগুন পুরো বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দেখতে পেয়ে ভেতরে থাকা যাত্রীরা চিৎকার শুরু করেন। পরে ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে থামানো হয়। দৌড়ে হাবিবুর ও ফাহিমসহ অন্য যাত্রীরা নামতে পারলেও ভেতরে আটকা পড়েন ছোট ইয়াসিন ও তার মা নাদিরা। তাদেরকে আর কোনোভাবেই বের করতে পারেননি। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস তাদের মরদেহ বের করে।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) মো. মাসুদ জানান, মরদেহ চারটি সকালে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘হরতাল সমর্থকরা তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সেপ্রেসের বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভোর ৫টা ৪ মিনিটে আমাদের কাছে এ সংবাদ আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের ৩টি ইউনিট পাঠানো হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টার পর পৌনে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে একটি বগি থেকেই চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।’

এদিকে, আগুন নেভানোর পর ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশনে রাখা হয়েছে।

এর আগে, বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ১১তম দফায় ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ চলাকালে গত ১৩ ডিসেম্বর ভোর সোয়া ৪টার দিকে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেলসড়কের ভাওয়াল রেলস্টেশনের কাছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

গভীর রাতে অবরোধকারীরা রেললাইন কেটে রাখায় এ দুর্ঘটনা ঘট। এতে এক যাত্রী নিহত এবং সাতজন আহত হন। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ট্রেনের বগি।

এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here