রোজায় ইমিউনিটি বাড়াতে যা খাবেন

0
58

রমজানে মুসল্লিরা রোজা রেখে দিনের আলোয় খাবার এবং পানীয় থেকে বিরত থাকেন। সন্ধ্যায় মাগরিবের আজানের পর ইফতার করেন। ইফতারের পর শরীরে শক্তি ও কর্মচঞ্চলতা বাড়ে। এ কারণে ইফতারে কী খাচ্ছেন, সেদিকে নজর দিতে হবে।

রমজানে সুস্থ থাকতে আপনার ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী হতে হবে। তাহলেই আপনি রোজায় বিভিন্ন রোগের হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। রোজা থাকার কারণে আমরা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকি। তাই আমাদের শরীরে সব রকমের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ হয় এমন খাবার খাওয়া উচিত। এমন কিছু ইমিউনিটি-বুস্টিং সুপারফুড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। এ কারণে রোজায় ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখুন। চলুন জেনে নিই রোজায় প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় কী কী খাবার রাখবেন–

সাইট্রাসজাতীয় ফল: মুসাম্বি, কমলা, আমলকি, আঙুরে ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের পরিমাণ বেশি। এই ফলগুলো খেলে রক্তের চাপ কমে। ফলে রক্তবাহিকায় যদি কোনোভাবে প্রদাহ হয়, তা-ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

লাল ক্যাপসিকাম: একটি লাল ক্যাপসিকাম একটি সবুজ ক্যাপসিকামের চেয়ে দ্বিগুণ ভিটামিন সি এবং আট গুণ ভিটামিন এ সরবরাহ করে। এটি আপনার ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া লাল ক্যাপসিকামের ভিটামিন সি আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, যা আপনার শরীর ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত করে, আপনার চোখ এবং ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

ব্রকলি: ব্রকলিতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই ছাড়াও ফাইবার। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ব্রকলি। এতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকায় ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে বাধা দেয়। সর্দি-কাশিও ঠেকাতে পারে ব্রোকলি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রকলি রান্নার চেয়ে স্টিমিং করে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

রসুন: যাদের অ্যাজমা, কফ, নিউমোনিয়ার সমস্যা রয়েছে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধে রসুন মিশিয়ে খেলে সমস্যা দূর হয়। এতে শরীর অনেক চাঙা থাকবে। দুধের সঙ্গে রসুন মিশিয়ে খেলে খারাপ কোলেস্টেরল (মানে ব্যাড কোলেস্টেরল) কমাতে সাহায্য করে। ভাল কোলেস্টেরল বাড়াতেও সাহায্য করে।

আদা: খালি পেটে আদা পানি খেলে হজমশক্তি বাড়ে। এই কারণে, এটি বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের ফোলাভাব, বমি, ডায়রিয়া এবং বমি বমি ভাব দূর করতেও খুব কার্যকর। তাছাড়া এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। এর কারণে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।

দই: হার্ভার্ডের টিএইচ (T.H)-এ পুষ্টির উৎস চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ ব্যাখ্যা করে যে, সাধারণ দই প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস, তবে এতে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া উপাদানও রয়েছে। এই জীবন্ত অণুজীবগুলোকে প্রোবায়োটিক বলা হয় এবং এগুলো আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজমশক্তি উন্নত করে। এক কাপ সাধারণ কম চর্বিযুক্ত দইয়ে প্রায় ৪১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী ও পুরুষদের ১০০০ মিলিগ্রাম, ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী পুরুষদের জন্য ১০০০ মিলিগ্রাম, ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদের জন্য ১২০০ মিলিগ্রাম এবং বেশি বয়সের জন্য ১২০০ মিলিগ্রামের দৈনিক ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।

তুলসী বীজ: তুলসী বীজে রয়েছে আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আলফা-লিনোলিক অ্যাসিড (ALA) এবং ফাইবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং হজমে সহায়তা করে।

তরমুজ: শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি বহু রোগ থেকেও সুরক্ষা দেয় তরমুজ। এই ফলের প্রায় ৯০ শতাংশই পানি। শরীর হাইড্রেট রাখে এবং এনার্জিও বাড়ায়। এ ছাড়াও তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন, ভিটামিন সি এবং ক্যারোটিনয়েড।

আম: ফলের রাজা আম। বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে আমে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর উচ্চ ফাইবার উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আমপান্নায়ও প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ম্যাঙ্গিফেরিন থাকে, যা সানস্ট্রোক প্রতিরোধ করে।

ডাব: ডাবের পানিতে ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেট অত্যন্ত কম। ডাবে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম, যা আমাদের শরীরে খনিজ সরবরাহ করে এবং শরীরকে হাইড্রেট রাখে।

পেঁপে: ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকে পেঁপে। পুষ্টিবিদদের কাছে পেঁপের পরিচয় ‘সুপারফুড’ হিসেবে। পেঁপেঁ ওজন কমানো থেকে শুরু করে হজমে সহয়তা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এটি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

কিউই: পেঁপের মতো, কিউইগুলিও ফোলেট, পটাসিয়াম, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি সহ প্রয়োজনীয় পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস। এই সবগুলো উপাদান হার্টের জন্য উপকারী। কয়েকটি ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত কিউই ফল খেলে প্রদাহের জ্বালা, কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে এবং তা রক্তচাপ রক্ষা করতে সাহায্য করে।

সূত্র: হেলথলাইন

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here