গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। সবারই এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়তে শুরু করে গরমের এ সময়ে। তবে শিশুরাই যেন এ রোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে জেনে রাখা ভালো এসময় আপনার করণীয় কী?
ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত একটি রোগ। আর তাই অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি খাবার এবং দূষিত পানি ডায়রিয়া রোগের অন্যতম কারণ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাফিসা আবেদীন বলেন, বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। তবে মূলত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হয়।
গরমের সময়ই কেন এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়, এ বিষয়ে একই প্রতিষ্ঠানের ডা. সোহাগ বলেন, এসময় যে ডায়রিয়া হচ্ছে তা মূলত সামার ডায়রিয়া।
গরমে স্বস্তি পেতে অনেকেই এসময় রাস্তার ঠান্ডা পানীয় পান করেন। ঘাম থেকে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত থাকতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেন না। যা এসময় শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের ডায়রিয়া হওয়ার বড় একটি কারণ।
সেই সঙ্গে হাত না ধুয়ে খাবার প্রবণতা তো রয়েছেই। গরমের সময় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে হজমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। এ সমস্যায় ফ্রিজে রাখা সংরক্ষিত খাবারেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। যা খাওয়ার পর পেটের নানা সংক্রমণ হওয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়ার সংক্রমণও বাড়ায়।
রাস্তার বাসি ও খোলা খাবার খাওয়ার ফলেও গরমের সময় ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের প্রকোপ বাড়ে। তাই ডায়রিয়া রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে এসব অস্বাস্থ্যকর প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে হবে।
আর যদি কোনো কারণে ডায়রিয়া রোগ হয়েই যায় তবে শরীরে পানিশূন্যতা ও রক্তে লবণের তারতম্য দেখা যায়। এই সমস্যা দুটিকে রোধ করতে পারলেই ডায়রিয়া রোগ থেকে কোনো ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডায়রিয়ার সময় প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। তাই ডায়রিয়া থেকে দ্রুত মুক্তিতে তরল খাবারের প্রাধান্য দিয়ে একটি ডায়েট লিস্ট তৈরি করুন। যেমন-
১। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি শিশুকে খাবার স্যালাইন খেতে দিন।
২। দ্রুত ডায়রিয়া কমাতে অল্প লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে আলু সিদ্ধ ভাত খাওয়ান।
৩। কাচা কলা দিয়ে শিং মছের পাতলা ঝোল দিয়ে ভাত খাওয়াতে পারেন।
৪। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি শিশুকে কলা খেতে দিন। কলা পেট পরিষ্কার ও হজমে সাহায্য করে।
৫। ডায়রিয়ায় দই বেশ উপকারী। কারণ দইয়ে প্রোবায়োটিকস বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি করে।
৬। ডায়রিয়ায় পানির ঘাটতি দ্রুত দূর করতে ডাবের পানি খেতে পারেন।
৭। শিশুর বয়স খুব কম হলে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।
৮। শিশুর দ্রুত ডায়রিয়া সারাতে স্যুপ, ভাতের মাড় দারুণ কাজ করে।