৩ চেয়ারম্যানের ট্রান্সফর্মার উধাও

0
22

শস্যভান্ডার খ্যাত সিংড়ার চলনবিলে আবার এক রাতে দুই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ১০ কৃষকের সাতটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে উপজেলার শহরবাড়ি-কান্তনগর, জামতলী-পাকুরিয়া ও পুঠিমারি বিলে এ চুরি সংঘটিত হয় বলে পল্লি বিদ্যুতের অফিস সূত্রে জানা গেছে।

এর ছয় দিন আগে এক রাতে আরেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিন কৃষকের ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে গত ৩৫ দিনে সিংড়ার চলনবিলে ২৮টি সেচ ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটল। এদিকে কৃষকদের নিজ নিজ সেচ মোটর ঘরে পাহারার ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

পুলিশি টহল জোরদার ও গ্রামবাসীর উদ্যোগে পাহারা বসিয়েও চুরি রোধ সম্ভব না হওয়ায় বোরো ধান কাঁচা থাকতেই অনেক কৃষক তাদের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও সেচ মোটর খুলে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক কৃষক নতুন করে ট্রান্সফরমার কিনতে না পেরে তাদের জমিতে সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সিংড়া জোনাল অফিস ও কৃষক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোররাতে উপজেলার শহরবাড়ি ও কান্তনগর মাঠের তিনটি বৈদ্যুতিক পুল থেকে চৌগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা ও একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেনসহ কৃষক মনিরুজ্জামান, লুৎফর রহমান এবং নাইম হোসেনের তিনটি ২৫ কেভি ট্রান্সফরমার চুরি সংঘটিত হয়।

এই রাতেই জামতলী-পাকুরিয়া মাঠ থেকে আব্দুস সাত্তার মাস্টার, আহাদ আলী ও মোসলেম উদ্দিন নামের তিন কৃষকের ২০ কেভি তিনটি এবং পুঠিমারী বিল থেকে অপর এক কৃষকের ৫ কেভি একটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। বোরো ধান ঘরে তোলার শেষ মুহূর্তে এসে আবার এক রাতে নতুন করে দশ কৃষকের ৫০ কেভি ট্রান্সফরমার চুরি যেন কৃষকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

এর আগে চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল এক রাতে সাতপুকুরিয়া বিল থেকে ইটালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলামসহ স্থানীয় কৃষক শাহাদত হোসেন ও আতাহার আলীর ১৫ কেভির তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি গেছে।

এছাড়াও ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ১৪ এপ্রিল একরাতেই উপজেলার কয়ড়াবাড়ি ও বিলতাজপুর বিলের পাশাপাশি চারটি বৈদ্যুতিক পুল থেকে সাত কৃষকের ৫০ কেভি পাঁচটি ট্রান্সফরমার চুরি সংঘটিত হয়। এতে স্থানীয় কৃষক শফিকুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, জামাল উদ্দিন, আলেয়া বেগম, মাওলানা অজিদ, জিল্লুর রহমান ও আবেদ আলীর বোরো জমিতে সেচ কার্য বন্ধ হয়ে যায়।

একই রাতে উপজেলার কালিগঞ্জের গোয়ালবাড়িয়া বিল থেকে এক দরিদ্র কৃষকের পাঁচ কেভির একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এদিকে গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সাতপুকুরিয়া ও বিলতাজপুর থেকে দুইদফা কৃষক শামীম হোসেন, মহসিন আলম, মকবুল হোসেন, আনিছুর রহমান, সাহাকুল ইসলাম, টিপু সুলতান ও প্রফেসর আকতার হোসেনের আটটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়।

পরে গ্রামবাসীর উদ্যোগে রাত জেগে লাঠি-বাঁশি পাহারা বসিয়েও আবার গত ৩ এপ্রিল রাতে সাতপুকুরিয়া বিল থেকে আজিজুর রহমান, ফজলুর রহমান ও আলী আজম নামে তিন কৃষকের ১৫ কেভি একটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়।

এছাড়াও সম্প্রতি উত্তর দমদমা কাঁটাজোলা ব্রিজের পাশ থেকে এক রাতে পুটু মিয়া, বাগান আলী ও আব্দুস সাত্তার নামের তিন কৃষকের আরও তিনটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি সংঘটিত হয়েছে।

আর বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার এর সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে সেচ মোটর ও চিরকুট লিখে মিটার চুরির ঘটনা ঘটছে। অনেক কৃষক বিকাশে টাকা পরিশোধ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কৃষকরা তাদের বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে শহরবাড়ি গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, আর দুটি সেচ দিতে পারলেই তার ধান ঘরে তুলতে পারতেন; কিন্তু হঠাৎ ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ায় সেচ বন্ধ হয়ে গেল। প্রতিনিয়তই চুরির ঘটনা ঘটছে কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সিংড়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দিন দিন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। থানায় অভিযোগ ও কৃষকদের সচেতন করেও চুরি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে চৌগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা বলেন, এভাবে ধারাবাহিক ট্রান্সফরমার চুরি দুঃখজনক বিষয়। দিন দিন সিংড়াতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। এখানে পুলিশ প্রশাসনের গাফলতি রয়েছে। আর চুরি রোধে সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে ইটালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মন্তব্য করেন, পল্লী বিদ্যুতের কোনো দক্ষ লোকজন ছাড়া এই চুরি সম্ভব নয়। আর তার নিজেরই একটি ট্রান্সফরমার চুরি গেছে।

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এখন পর্যন্ত পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-১ সিংড়া জোনাল অফিসের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলা আমলে নিয়ে পূর্বে ট্রান্সফরমার চুরির সঙ্গে জড়িত এমন ৬-৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চুরি রোধে চলনবিল এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিংড়ার ইউএনও হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের তাদের নিজ নিজ সেচ মোটর ঘরে পাহারার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here