তিতাস যেন কেবল একটি নদীরই নাম!

0
116

দখল আর দূষণের কবলে পড়ে তিন দশকের ব্যবধানে নাব্যতা হারিয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী তিতাস। সেই সঙ্গে নদীতে কমে গেছে অক্সিজেনের মাত্রাও। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে মাছের বংশ বৃদ্ধির ক্ষমতা। এতে করে প্রভাব পড়েছে নদীপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকায়। বিভিন্ন স্থানে চর জেগে এটি হয়ে পড়েছে নৌচলাচলেরও অনুপযোগী। এখন তিতাস যেন কেবল একটি নদীর নামই! এ অবস্থায় খননের পাশাপাশি নদীটিকে বাঁচানোর জন্য এতে দূষণের মাত্রাও কমানোর দাবি স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে তেমন মাছ না পেয়ে পরিবার নিয়ে কোনও রকমে দিনপার করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দা ধীরেন্দ্র দাস। বছরের ছমাসই চলে তার অতিকষ্টে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘আগে অবস্থা ভাল ছিল। নদীতে মাছ পাওয়া যেত পর্যাপ্ত পরিমাণ। দূষিত হওয়ার কারণে এখন আর তেমন মাছ নেই নদীতে। খননের পাশাপাশি দূষণমুক্ত করলে আমরা কিছু মাছ ধরতে পারতাম হয়তো।’

শুধু ধীরেন্দ্রই নয়, একই কথা জানান এ নদীকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা সব জেলে পরিবার।

নির্মল দাস নামে আরেক জেলে জানান, এক সময় নদীতে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু শহরের মেড্ডা, পাইকপাড়া, কালাইশ্রী পাড়া ও আনন্দবাজার ঘাটসহ টাউন খাল এলাকায় পৌরসভার সুয়ারেজ পানির লাইনের কারণে তিতাসের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া শহরের পশ্চিমপাড় ভাদুঘর, মাছিহাতা, ঘাটুরা ও মজলিশপুরসহ এ নদীর বুকে জেগে ওঠেছে ডুবুচর। দখল আর দূষণের কারণে কমে গেছে মিঠা পানির মাছের বিচরণ। একরকম বন্ধ হয়ে গেছে লঞ্চসহ নৌযান চলাচল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরি।

এলাকার বাসিন্দা সোহেল ঋষি নামে একজন বললেন, তিতাসকে বাঁচাতে এর পাড়ে শহরের ময়লা-আবর্জনা ও দূষিত পানি ফেলা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি শহর অংশে নদীটি খনন করা হলে তিতাস ফিরে পাবে তার আপনগতি। বাড়বে মিঠা পানির মাছের সংখ্যা। স্বাভাবিক হবে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল।

এদিকে, পণ্যবাহী নৌকার মাঝি সুখন দাস বলেন, ‘পাড়গুলোতে ময়লা পড়ে ভরাট হয়ে গেছে যেন নদীটাই। আমরা নৌকা নিয়ে যেতে পারি না; আটকে যায়। নদীটা যদি খনন না করা হয়, তাহলে আর নৌকা চালানো যাবে না। আমদের দাবি, নদীটি দ্রুত খনন করা হোক।’

নদী সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন ‘তরী’র আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, ‘তিতাস আমাদের এতিহ্যবাহী একটি নদী। কালের বিবর্তনে নদীটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় নদীর বিভিন্ন অংশে চর জেগে ওঠেছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, এ নদীকে দ্রুত খনন করে আবারও আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হোক।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর কবীর জানান, নদীতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে মাছের বংশ বৃদ্ধি কমে যায়। মাছের প্রজননের জন্য এ দুটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নদীর পানি যদি দূষিত হয়, তাতে অব্যশই মাছের প্রজনন ব্যাহত হয়। তিতাসের পানি দূষণের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সমন্বয় সভায় তুলে ধরা হয়েছে। খাল বা নদী খনন করা হলে দূষণ যদি দূর করা যায়, তাহলে অব্যশই মাছের প্রজননও বাড়বে।

দূষণের কথা স্বীকার করে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিতাস নদী যতটুকু পৌর এলাকার মধ্যে পড়েছে, তার মধ্যে কিছু অংশে চর দেখা দিয়েছে। এতে জায়গাগুলো খনন করা জরুরি। দূষণ ও দখলের ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

অন্যদিকে পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক বিমল চক্রবর্তী জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া তিতাস নদীর শহরতলির প্রায় ১৪টি অংশে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম চলমান আছে। নদী দূষণের বিষয়ে পৌরসভাকে অবগত করা হয়েছে। পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে আমরা কাজ করছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান মুঠোফোনে জানান, শহরের যে জায়গাগুলোতে টেন্ডার করা হয়েছিল, তার বিভিন্ন স্থানে খনন করা হয়েছে। তারপরেও বিভিন্ন জায়গায় নদী ভরাট হয়ে যায়। প্রয়োজন হলে অবশিষ্ট অংশ খননের উদ্যোগ নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here