সুবর্ণচরে ৭০ এর ঘুর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত

0
291

আরিফুর রহমান।।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভয়াল গোর্কির আঘাতে লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় নোয়াখালীর সুর্বণচরের বিস্তীর্ণ এলাকা। উপকূলীয় অঞ্চলের সুবর্নচরে (তৎকালীন বাটার চর) ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলে। প্রকৃতির নারকীয় তান্ডবে পরিণত হয় বিরান ভূমিতে। ২০ ফুটেরও অধিক পানিতে তলিয়ে যায় গোটা জনপদ। প্রাণ হারায় লক্ষাধিক মানুষ। দুর্বিষহ সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের মানুষ।

সেই বিভীষিকাময় দিনটির স্মরণে লক্ষাধিক প্রাণের স্মরণে সুবর্ণচর উপজেলার সুবর্ণচর প্রেসক্লাবের আয়োজনে সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ও চন্দ্রকলি’র সহযোগিতায় আলোচনা সভা, স্মৃতি চারণ ও নিহতদের স্মরণে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে সুবর্ণচর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী এর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী বাবলু এর সঞ্চালনায় সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন মিলনায়তনে আলোচনায় অংশ নেন পূর্ব চরবাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ছালেহ উদ্দিন, সৈকত সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মীজানুর রহমান, ইন্ডিপেডেন্ট টিভির নোয়াখালী প্রতিনিধি আবু নাছের মঞ্জু, দৈনিক সমকাল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার জাহিদুর রহমান,
প্রাণের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আলম মাসুদ, নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বিষাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মোবারক, সুবর্ণচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামছুজ্জামান নিজাম, সিপিপি’র উপজেলা সংঘঠক আব্দুর রব, চরবাটা খাসের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশীম চন্দ্র দাস, শহীদ জয়নাল আবেদন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শিমুল চন্দ্র দাস, শিক্ষক নাছিম ফারুকী, দেলোয়ার হোসেন, সুবর্ণচর উপজেলা মডেল মসজিদের খতিব ক্বারী মো. আব্দুল মান্নান, সিপিপি সদস্য আনোয়ারুল হক, সুবর্ণচর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আরিফুর রহমান, সাংবাদিক আব্দুল আজিজ, শিক্ষার্থী সুলতান বায়েজিদ প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে ভয়াল ১২ নভেম্বরের বিষাদময় স্মৃতি চারণ করেন, গোর্কির সাথে লড়ায় করে বেঁচে যাওয়া ৮০ বছর বয়সী হাজী ফজলুল হক। তিনি সেদিনের তান্ডবের কথা তুলে ধরতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, অস্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন তার ৬ সন্তানকে ভেসে নিয়ে যায় জোয়ারের পানি। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ সবকিছু তছনছ করে দেয় গোর্কি। আশপাশের আত্মীয় স্বজনদের শলীল সমাধি হয়েছিল জোয়ারের পানিতে। অনেকের লাশ খুঁজে পায়নি। যারা বেঁচে ছিল তারা ক্ষুধার জ¦ালায় ছটপট করছিল, গাছের লতা-পাতা খেয়ে কোনো রকম বেঁচে ছিল। এসময় তার বেদনাময় স্মৃতি কন্ঠ ভারি হয়েছে আসে উপস্থিত সকলের।

সেদিন খেঁজুর গাছের মাথায় আশ্রয় নিয়ে বেঁচে যাওয়া মাঈন উদ্দিন, সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। উপকূলের কেউই বুঝে উঠতে পারেনি ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে এ জনপদের জন্য। হঠাৎ রাতে জোয়ারের শো-শো শব্দ পেতেই দেখি চারদিকে পানি আর পানি। মানুষের আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছে সবদিকে। সকাল হতেই সবদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাশ আর লাশ। মানুষ, গবাদি পশু, কুকুর বিড়াল, জীব জন্তুর মৃত দেহ এখানে সেখানে। কারো লাশ গাছে ঝুলছে, দাপন করার কোনো লোক ছিল না। কাপন ছাড়াই গণ কবর দেওয়া হয়েছে লাশের। আমার পরিবারের ৭ জনকে ভেসে নিয়ে গেছে সেদিন, তাদেরও লাশ খুঁজে পায়নি। স্বজন হারানোর বেদনা আজও আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এছাড়াও স্মৃতি চারণ করেন সিপিপির সদস্য আনোয়ারুল হক, নুর হোসেন প্রমূখ।

স্মরণ সভায় অন্যতম আলোচক লেখক ও সাংবাদিক আবু নাছের মঞ্জু ও জামাল হোসেন বিষাদ বলেন, ৭০ সালের এ ভয়াবতার স্মৃতি নিয়ে এখনো যারা বেঁচে আছে তারাও একদিন হয়তো থাকবে না। তাই তাদের কাছ থেকে সেদিনের ভয়াবহতার স্মৃতি ধরে রাখতে একটি ডকুমেন্টারী আকারে সংরক্ষণ করার জন্য সুবর্ণচর প্রেসক্লাবকে অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠানে ১২ ই নভেম্বরকে জাতীয়ভাবে উপকূল দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবী করেন আলোচকেরা।

Facebook Comments Box
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here